health officer

রাস্তায় জটিল প্রসব করালেন তরুণী হেলথ অফিসার

হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর বোলতলা গ্রামের বাসিন্দা তসলিমা মুর্শিদাবাদ জেলার কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চাকরি পান ২০১৮ সালে। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন সেখানে।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:০৫
Share:

তসলিমা পরভিন

পথের ধারেই পৃথিবীর প্রথম আলো দেখল শিশু।

Advertisement

মাত্র একটি ব্লেডের ভরসায় মায়ের নাড়ি কেটে তার জন্ম দিলেন তরুণী কমিউনিটি হেলথ অফিসার তসলিমা পরভিন। শিশুটির পা বেরিয়ে এসেছিল গর্ভ থেকে। যন্ত্রণায় ছটফট করছিল মা। জটিল অস্ত্রোপচারেও এমন ক্ষেত্রে মা ও শিশুকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যায় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সেখানে উপায়ন্তর না দেখে ঝুঁকি নিয়ে তরুণীর প্রসব করান তসলিমা। বছর ছাব্বিশের তরুণীর বিচক্ষণতা এবং সাহসের তারিফ করছেন চিকিৎসকেরা।

হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর বোলতলা গ্রামের বাসিন্দা তসলিমা মুর্শিদাবাদ জেলার কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চাকরি পান ২০১৮ সালে। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন সেখানে। জুলাই মাস থেকে বসিরহাট ১ ব্লকের কোদালিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কমিউনিটি হেলথ অফিসার হিসাবে কাজ করছেন। শুক্রবার দুপুরে গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই ফিরছিলেন বাড়িতে। শাঁকচুড়ো বাজারের কাছে পথের ধারে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে দেখনে, এক তরুণী যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। পাশেই তাঁর বৃদ্ধা মা। কেঁদে চলেছেন তিনি।

Advertisement

অবস্থা দেখে তসলিমা বুঝে নেন, অবিলম্বে প্রসব করাতে না পারলে ঘোর বিপদ।
পরিস্থিতির গুরুত্ব প্রসূতি ও তাঁর মাকে বুঝিয়ে বলেন তসলিমা। জানান, একটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন তিনি। তবে ঝুঁকি যথেষ্টই। প্রসূতির মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়ের যা অবস্থা এমনই বাঁচানো হয় তো যাবে না। তসলিমা যেন যে ভাবে হোক শেষ চেষ্টা করেন।

হাতের কাছে যন্ত্রপাতি কিছুই ছিল না। একজোড়া গ্লাভস হলে ভাল হত। কিন্তু ভরদুপুরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় তা জোগাড় হয়নি। প্রসূতির মাকে একখানা ব্লেড জোগাড় করে আনতে বলেন তসলিমা।

সেটা অবশ্য জুটে যায়। খানিকক্ষণের চেষ্টায় পুত্রসন্তান প্রসব করেন তরুণী। কিন্তু নাড়ি জড়িয়ে ছিল শিশুটির গলায়। ব্লেড দিয়ে সেটি কেটে দেন তসলিমা। সদ্যোজাতের মায়ের শা়ড়ির সুতো ছিঁড়ে নাড়ির কাটা অংশ বেঁধে দেন।

কিন্তু শিশুটি শ্বাস নিচ্ছিল না। কোনও মতে অটো জোগাড় করে ৫ কিলোমিটার দূরে টাকি গ্রামীণ হাসপাতালে ছোটেন তসলিমা। সেখানে চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে হাত লাগান। শেষমেশ কেঁদে ওঠে নবজাতক। পরে তাকে পাঠানো হয়েছে আরজিকর হাসপাতালে। তার মা বছর বাইশের ফতিমা খাতুন ভাল আছে বলে জানিয়েছে পরিবার। তসলিমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা।

ফতেমাদের বাড়ি হাসনাবাদ থানার তকিপুর গ্রামে। তাঁকে নিয়ে মা সায়েরা বসিরহাট থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে অটোর মধ্যে ফতেমা অসুস্থ হয়ে পড়লে শাঁকচুড়ো বাজারে নেমে যান। ফতেমার ভাই বাবুরালি শেখ বলেন, “ডাক্তার দিদিকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাবো। উনি না থাকলে কাউকেই হয় তো বাঁচানো যেত না।’’

হাসনাবাদের বিএমওএইচ সাহিন হাসান বলেন, “এটা খুবই প্রশংসনীয় কাজ। উনি যে উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসিকতা দেখিয়েছেন, এমন অনেকের পক্ষেই সম্ভব ছিল না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই খুশি ওঁর ভূমিকায়। উনি গাড়ির অপেক্ষায় থাকলে মা ও বাচ্চার ক্ষতি হতে পারত।”

আর কী বলছেন তসলিমা?

তাঁর কথায়, ‘‘আমি আগে কখনও একা এমন জটিল প্রসব করাইনি। সিনিয়র চিকিৎসকদের সাহায্য করতাম মাত্র। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখেই বুঝেছিলাম, ঝুঁকি রয়েছে। তাই বলে দিয়েছিলাম, বাচ্চাকে হয় তো বাঁচানো যাবে না। তবুও চেষ্টা করেছিলাম। পিছু হটিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement