মেয়েদের রাজনীতিতে আসা উচিত, মনে করছেন নতুন মহিলা প্রার্থীরা

মেয়েরা শুধু ঘরের কাজ করে যাবে, আর মুখ বুজে নানা অত্যাচার মেনে নেবে, এমন পরিস্থিতির বদল দরকার— মনে করেন জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী মিঠু দাসপুরকাইত। জীবনে প্রথম রাজনীতিতে পা রাখলেন এমএ পাশ প্রার্থী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেক মহিলা রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুক। নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নিক। সকলকে সংসারের কাজ সামলে রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে।’’

Advertisement

দিলীপ নস্কর

জয়নগর শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৫
Share:

ওপরে বাঁ দিক থেকে, অপর্ণা দাসঘরামি, প্রতিমা দাস হালদার, তাপসী পাল, নিচে বাঁ দিক থেকে তৃষ্ণা দাস, জবারানি দাস ও মিঠু পুরকাইত। নিজস্ব চিত্র।

মেয়েরা শুধু ঘরের কাজ করে যাবে, আর মুখ বুজে নানা অত্যাচার মেনে নেবে, এমন পরিস্থিতির বদল দরকার— মনে করেন জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী মিঠু দাসপুরকাইত।

Advertisement

জীবনে প্রথম রাজনীতিতে পা রাখলেন এমএ পাশ প্রার্থী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেক মহিলা রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুক। নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নিক। সকলকে সংসারের কাজ সামলে রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে।’’ ছোটবেলা থেকে কাউকে রাজনীতি করতে দেখেননি মিঠু। তাঁর বাপের বাড়ির এলাকায় নাকি লোকে রাজনীতি করতেই ভয় পেতেন বলে জানালেন তিনি। তবে বছর সাতেক আগে বিয়ে হয় কংগ্রেস পরিবারের পাত্র মিহির দাসের সঙ্গে। কিন্তু নিজে কখনও মিছিল-মিটিংয়ে যাননি। এ বার এই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় এমন মহিলাকেই অবশ্য বেছে নেওয়া হয়েছে প্রার্থী হিসাবে। মিঠু বলেন, ‘‘স্বামী আর দলের উপরে ভরসা করেই প্রার্থী হয়েছি। প্রচারে বেরিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লাগছে। তাঁরা কত কাছের মনে করে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন আমাকে। মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাড়াঁনোই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য।’’

২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এসইউসির প্রার্থী হয়েছেন তৃষ্ণা দাসপুরকাইত। জীবনে প্রথম প্রার্থী হলেও তাঁর বাবা ওই দলের একজন সক্রিয় কর্মী। বিএ পাশ ওই বধূ স্কুল-কলেজ জীবনে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র হয়ে রাজনীতি করেছেন। এগারো বছর আগে বিয়ে হয় এসইউসি-র সক্রিয় কর্মী সুকান্তবাবুর সঙ্গে। এ বার ভোটের প্রার্থী হয়ে খুশি তৃষ্ণাদেবী। বললেন, ‘‘প্রচারে বেরিয়ে প্রায়ই মহিলাদের মুখে শুনছি, রাজ্যের নারী নিগ্রহের ঘটনার কথা। কিন্তু রাজ্য সরকার এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ প্রতিটি মহিলার এখন রাজনীতিতে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। ভোটে দাঁড়ালেন কেন? উত্তরে তৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘আমি সমাজের কাজ করতে চাই। মদ-জুয়া থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে চাই।’’

Advertisement

বছর বত্রিশ বয়সের গৃহবধূ প্রতিমা দাস হালদার এ বার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। মন্দিরবাজারেই তাঁর বাপের বাড়ি। শ্বশুর বাড়িও ওই এলাকাতেই। দুই বাড়িই এখন তৃণমূল সমর্থক। উচ্চমাধ্যমিক পাশ ওই বধূর ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিলই। দলের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে মেনেও নেন। প্রতিমাদেবীর কথায়, ‘‘আমি পরিবার ও প্রতিবেশীদের অনুমতি নিয়েই ভোটে দাঁড়িয়েছি। তবে ভোটে দাঁড়িয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বুঝতে পারছি মানুষ কতটা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। অনেকের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড নেই।’’ এলাকায় নিকাশি সমস্যা রয়েছে। এর জন্য প্রতি বছর বর্ষায় রাস্তাঘাট জলে ডুবে থাকে। সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান করতেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান প্রতিমাদেবী।

জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জীবনে প্রথম বার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অপর্ণা দাস ঘরামি। বছর তিরিশ বয়সের ওই গৃহবধূ রাজনীতিতে তেমন সড়গড় নন। স্বামীর বাড়ি বা বাপের বাড়িতে সে ভাবে রাজনীতির পরিবেশ নেই। স্বামী সুজিত দাস অটো চালক। দল তাঁর স্ত্রীকে নিবার্চনে দাঁড়ানোর কথা বলার পরে তিনি রাজি করান অপর্ণাদেবীকে। মাধ্যমিক পাশ অপর্ণাদেবী জানান, অনেক দিন ধরেই ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল। সুযোগ পেয়ে খুব খুশি। বললেন, ‘‘ভোটে দাঁড়ানোর পরে প্রচারে গিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে অবাক হয়ে গেলাম। ওঁদের বয়স ২৫-৩০ বছরের মধ্যে। ভোট চাইতেই মুখের উপরে বলে দিলেন, আমাদের এখনও ভোটার কার্ড হয়নি। সমস্যা রয়েছে রেশন কার্ড নিয়েও। ভোটে দাঁড়ানোর কারণ হিসাবে প্রার্থী বলেন, ‘‘মানুষের পাশে দাঁড়াতেই ভোটে দাঁড়ানো। তা ছাড়া এলাকায় নিকাশি, পানীয় জল, শৌচাগারের সমস্যা সমাধান করার সুযোগ পাব।’’ এই এলাকায় অনেক দুঃস্থ পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী করে দেওয়ার উদ্যোগ করবেন বলেও তিনি জানান।

৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বছর ছাব্বিশের তাপসী পাল। বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়িতে রাজনীতির পরিবেশ নেই। তবে বিজেপি-র প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল। দলের নেতারা ব্যবসায়ী স্বামী সন্দীপ পালকে জানান, স্ত্রীকে ভোটে দাঁড় করাতে রাজি করানোর জন্য। রাজি হয়ে যান তাপসীদেবী। তবে ভোটে দাঁড়ানোর গোপন ইচ্ছেটাও ছিল। পুর এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবা, রাস্তাঘাট, নিকাশির সংস্কারে জোর দিতে চান তাপসীদেবী।

৭ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বছর চল্লিশের জবারানি নন্দী। বিএ পাশ বধূর বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে রাজনীতির পরিবেশ রয়েছে বলে জানালেন। প্রথমবার ভোটে দাঁড়াতে পেরে আপ্লুত তিনি। এলাকার মানুষের নানা উন্নয়নের কাজ করার ইচ্ছে তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement