শ্রদ্ধা: কানাইলালের আত্মাহুতি দিবস পালন। নিজস্ব চিত্র।
মজিলপুরের বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যকে চেনার রাস্তা খুলে গেল গোটা বিশ্বের সামনে।
মঙ্গলবার কানাইলালের ‘আত্মাহুতি দিবস’ উপলক্ষে জয়নগর থানার পুলিশ ও প্রত্যয়ের উদ্যোগে উইকিপিডিয়ায় যোগ করা হল বিপ্লবী কানাইলালের জীবন কাহিনি।
১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তর ফাঁসির আদেশ দেওয়া ইংরেজ বিচারক আরআর গার্লিককে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছিলেন কানাইলাল। ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির আদেশ দেন তৎকালীন আলিপুর দায়রা আদালতের বিচারপতি গার্লিক। এই নির্দেশ মেনে নিতে পারেনি বিপ্লবী সংগঠনগুলি। এর আগে বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসেরও ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন এই গার্লিক। প্রতিশোধের পরিকল্পনা শুরু করেন বিপ্লবীরা। গার্লিক হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় মজিলপুরের বছর বাইশের যুবক কানাইলালকে।
ছাতার ভিতর পিস্তল লুকিয়ে ধুতি-কোর্ট পরা কানাইলাল হাজির হন আলিপুরে গার্লিকের এজলাসে। অন্য একটি মামলা চলাকালীন হঠাৎই পিস্তল বের করে পর পর দু’টি গুলি চালিয়ে দেন গার্লিকের উপরে। তেড়ে আসে পুলিশ। কানাইলালকে লক্ষ্য করে শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। তবে ততক্ষণে পরিকল্পনামাফিক সঙ্গে রাখা পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কানাইলাল। কানাইলালের মৃতদেহের উপরেই গুলি চালিয়ে দেহ ঝাঁঝরা করে দেয় পুলিশ। পরে কানাইলালের পকেট হাতড়ে একটি চিরকুট মেলে। তাতে লেখা ছিল “ধ্বংস হও। দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির দণ্ড লও।—বিমল দাশগুপ্ত।”
এই বিমল দাশগুপ্ত ছিলেন মেদিনীপুরের বিপ্লবী। তিনি আর এক ইংরেজ পেডি সাহেবকে হত্যা করেছিলেন। পুলিশ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। চিরকুট পেয়ে পুলিশ ভাবে, মৃত কানাইলালই ফেরার বিমল দাশগুপ্ত। ফলে কানাইলালের পরিচয় চাপা পড়ে যায়। পরে ‘আসল’ বিমল ধরা পড়েন। এই পরিস্থিতিতে গার্লিক-হত্যাকারী নামহীন শহিদ হিসেবেই থেকে যান। কানাইলালের অবদানও অজানা থেকে যায় গোটা দেশের কাছে। পরবর্তীকালেও স্বাধীনতা ইতিহাসেও তিনি কিছুটা বিস্মৃত থেকে গিয়েছেন।
কানাইলালের জন্মস্থান জয়নগর-মজিলপুরে অবশ্য প্রতি বছরই ২৭ জুলাই শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন হয় তাঁর ‘আত্মাহুতি দিবস’। এ বারও মজিলপুরে তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান বহু মানুষ। কানাইলালের স্কুল জেএম ট্রেনিংয়েও দিনটি পালন করা হয়। এলাকার বিভিন্ন সংগঠন নানা ভাবে দিনটি পালন করে। করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কানাইলালের স্মরণে এ দিন জয়নগর থানার তরফে একটি ট্যাবলো বের করা হয়। আত্মাহুতি দিবসে জয়নগরবাসীদের ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি বদলে কানাইলালের ছবি দেওয়ার আবেদন জানান আইসি অতনু সাঁতরা। সেই আবেদনে সাড়া দেন বহু মানুষ। মূলত অতনুর পরিকল্পনাতেই উইকিপিডিয়াতে কানাইলালের জীবন কাহিনি যোগ করা হয়।
অতনু বলেন, “এই বীর বিপ্লবীর কাহিনি অনেকেরই অজানা। উইকিপিডিয়ার খুব কম তথ্য ছিল। আমরা চেষ্টা করলাম কানাইলালের গোটা জীবন সকলের কাছে পৌঁছে দিতে।”