কাটা হচ্ছে পাট, তবে কোথায় কী ভাবে পচানো হবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তা।— নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টির দেখা নেই। ডোবায় জল নেই। দোকান-বাড়ি তৈরির ফলে ফাঁকা জমির অভাব চারদিকেই। এই পরিস্থিতিতে পাট পচানোর জায়গা মেলা ভার।
সব মিলিয়ে বসিরহাট মহকুমার পাটচাষিদের দুশ্চিন্তা প্রচুর। আষাঢ় শেষ হয়ে শুরু হয়েছে শ্রাবণ। এ সময়ে অবিরাম বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু তার বদলে গরম কমার নাম নেই। বৃষ্টির দেখা নেই। কার্যত হাত গুটিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন পাটচাষি।
রথযাত্রার দিন পাট কেনার ‘শুভক্ষণ’। এ দিন নতুন পাট কেনেন আড়তদারেরা। কালীবাড়িতে গিয়ে নতুন খাতায় ‘মোহর’ করানো হয়। মিষ্টি বিতরণ করেন পাড়া-পড়শিদের মধ্যে। উৎসবে মাতেন পাটচাষি, আড়তদারেরা। তবে এ বার এখনও পাট ভেজানোর মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবং পাট ডোবানোর মতো জলাশয়ের অভাব চিন্তায় ফেলেছে চাষিদের। পাট ব্যবসায়ী বাবুল দাস বলেন, ‘‘মরসুমে বাদুড়িয়ায় অন্তত ৮-১০ লক্ষ মন পাট কেনাবেচা হয়। সরকারি ভাবেও পাট কেনা হয়। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম।’’
বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৫৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে পাট কাটার মরসুম। এ সময়ে জলের অভাবে অধিকাংশ চাষি পাট কাটতে পারছেন না। যাঁরা পাট কেটেছেন, পচানোর জলের অভাবে ভোগাচ্ছে তাঁদের। খাল, বিল, ডোবায় জল শুকিয়েছে। গরমে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে।
মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া এবং বসিরহাটের বহু চাষি ঋণ নিয়ে পাট চাষ করেছেন। তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের ফলও ভাল হয়নি বলে জানালেন অনেকে। স্বরূপনগর এবং বাদুড়িয়ার গ্রামের বাসিন্দা ফজের আলি, শম্ভু মল্লিক বলেন, ‘‘দোকান-বাড়ি গজিয়ে ওঠায় জলা জায়গা কমছে। পাট পচানোর জায়গা মেলে না। তার উপরে বৃষ্টি নেই। সময় মতো না কাটলে পাটে ফুল এসে গেলে আঁশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দিকে, সময় মতো পাট কাটতে না পারলে ওই জমি ধানের জন্যও তৈরি করা
যাবে না।’’ এই পরিস্থিতিতে উভয়সঙ্কটে পড়েছেন চাষিরা। কৈজুড়ি গ্রামের পলাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বার বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে।’’ যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাঁরা শ্যালোর মাধ্যমে ডোবায় জল জমিয়ে সেখানে পাট পচানোর ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু বেশির ভাগ চাষির পক্ষেই তা সম্ভব হচ্ছে না। স্বরূপনগর ব্লক সহ কৃষি আধিকারিক নাজিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘এই ব্লকে আনুমানিক ৪৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে অধিকাংশ ডোবায় জল নেই। চাষিরা পাট কেটে তা পচানোর জন্য জল পাচ্ছেন না। আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টি না হলে মাঠে পাট শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’’