স্কুলছুটদের স্কুলে ফিরিয়ে জয় জাতীয় পুরস্কার

কৃষ্ণেন্দু কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পুলিশের চাকরি দিয়ে। ছিলেন কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর। সেই চাকরি ভাল লাগেনি বেশিদিন। শিক্ষাজগতে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশের চাকরি ছেড়ে তাই চলে আসেন শিক্ষকতায়। আর শিক্ষকতা করতে করতেই দায়িত্ব পান স্কুল পরিদর্শকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়নগর শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৩
Share:

জয়ী: পুরস্কার হাতে কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। ছবি: সুমন সাহা

বহু স্কুলছুটকে স্কুলে ফিরিয়েছেন। ফিরিয়েছেন পড়াশোনার মূলস্রোতে। এই কাজের স্বীকৃতিতেই জাতীয় পুরস্কার পেলেন জয়নগরের কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে স্মারক ও শংসাপত্রে তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষাজগতে কোনও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই এই পুরস্কার দেওয়া হয় জেলা ও ব্লক স্তরের প্রশাসকদের। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এ বার দু’জন জিতেছেন এই পুরস্কার। তাঁদেরই একজন কৃষ্ণেন্দু।

Advertisement

কৃষ্ণেন্দু কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পুলিশের চাকরি দিয়ে। ছিলেন কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর। সেই চাকরি ভাল লাগেনি বেশিদিন। শিক্ষাজগতে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশের চাকরি ছেড়ে তাই চলে আসেন শিক্ষকতায়। আর শিক্ষকতা করতে করতেই দায়িত্ব পান স্কুল পরিদর্শকের।

কৃষ্ণেন্দু বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে অবর স্কুল পরিদর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০১১ সালে। ২০১৭ পর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলেন। ছ’বছরে নিখুঁত পরিকল্পনায় বদলে দেন প্রত্যন্ত ওই এলাকার শিক্ষাক্ষেত্রের ছবি। স্কুলে স্কুলে গড়ে তোলেন ‘ড্রপ-আউট প্রিভেনশন ক্লাব’। এই ক্লাবের তৎপরতায় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে এলাকার বিভিন্ন স্কুলের স্কুলছুটের সংখ্যা। বহু স্কুলছুট স্কুলে ফেরে। বাড়ে স্কুলে ভর্তির হারও। সামগ্রিক এই কাজের স্বীকৃতীতেই এল পুরস্কার।

Advertisement

পরিদর্শক হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে প্রথমেই ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ছাড়ার কারণ খুঁজে বের করার দিকে জোর দেন কৃষ্ণেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা বিয়ে। একটু বড় হলেই বাবা-মা মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান। পড়াশোনা শিকেয় ওঠে। ছেলেদের ক্ষেত্রে অনেকেই কাজ সংক্রান্ত নানা প্রলোভনে পড়ে ভিন রাজ্যে চলে যায়। গিয়ে দেখা যায়, তারা হয়তো জোগাড়ের কাজ করছে। তা ছাড়া আলু-পেঁয়াজের মরসুমে ক্ষেতে কাজ করার জন্যও অনেকে স্কুল ছাড়ে।

কৃষ্ণেন্দু জানান, দেখা গিয়েছে, স্কুল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই পড়ুয়াকে স্কুলে ফেরাতে না পারলে মুশকিল। অনেকসময়ই নতুন করে স্কুলে যোগ দিয়ে বন্ধুবান্ধবের অভাবে তারা আবার পালিয়ে যায়। এই সব সমস্যা মোকাবিলার জন্যই তৈরি হয় ‘ড্রপ-আউট প্রিভেনশন কমিটি’। স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পার্শ্বশিক্ষক ও গ্রামের গণ্যমান্য দু’একজনকে নিয়ে কমিটি তৈরি হয়। কোনও পড়ুয়া এক সপ্তাহের বেশি স্কুলে না এলে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর শুরু করে কমিটি। তাকে ফিরিয়ে আনা হয় স্কুলে। এই ভাবে ড্রপ-আউটের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে।

স্কুলছুটদের নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি, নাবালিকা বিবাহ রোধ, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন কৃষ্ণন্দু। জাতীয় পুরস্কারকে তাঁর এই সব কাজের অনুপ্রেরণা হিসেবেই দেখছেন তিনি। কয়েকদিন হল নিজের শহর জয়নগরে বদলি হয়েছেন। এই মুহূর্তে জয়নগর পূর্ব চক্রের স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কৃষ্ণেন্দু বলেন, ‘‘দেখছি, এখানেও বহু স্কুলে স্কুলছুটের ঘটনা ঘটে। তা আটকাতে কাজ শুরু করব। এ ছাড়া আরও নানা সমস্যা রয়েছে। সেগুলি নিয়েও ভাবনা-চিন্তা চলছে। এরকম একটা সম্মান কাজ করার উৎসাহ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement