কথা এগিয়ে গিয়েছিল অনেক দূর। কিন্তু তারপরে কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতরের সাড়াশব্দ ছিল না। এই পরিস্থিতিতে পরিত্যক্ত জম্বুদ্বীপ ঘিরে টুরিস্ট সার্কিট গড়ার প্রকল্পে আর উৎসাহ নেই গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের। এ ব্যাপারে বন দফতরকে দেওয়া প্রায় ৩ কোটি টাকাও এখন ফেরত চাওয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন কর্তৃপক্ষ।
গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের (জিবিডিএ) চেয়ারম্যান বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক এখনও ছাড়পত্র দেয়নি। তাই আমরা বন দফতরের কাছে টাকা ফেরত চাইব বলে ভেবেছি। কারণ সাগরের উন্নয়ন অন্য খাতে তা কাজে লাগানো যাবে।’’
তিন দশক আগে একটি মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জম্বুদীপে মানুষের পা ফেলা বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। বাম আমলে তা কার্যকরও হয়। তার জেরে শুঁটকি মাছের কারবারও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। ব্যবসায়ীরা নামখানা এবং সাগরে এসে ব্যবসা সরিয়ে নেন। তারপর থেকে ফ্রেজারগঞ্জ থানার অধীনে জম্বুদ্বীপ এক রকম পরিত্যক্ত গভীর অরণ্য দ্বীপ হিসেবেই পরিচিত। ফ্রেজারগঞ্জ জেটিঘাট থেকে প্রায় ৪৫ মিনিটে জম্বুদ্বীপ ঘুরে আসা যায়। তবে সেখানে নামার অনুমতি পান না পর্যটকেরা।
২০১৫ সালে রাজ্য সরকার নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে জম্বুদ্বীপকে নিয়ে। বকখালি, জম্বুদ্বীপ এবং সাগর মিলিয়ে একটি টুরিস্ট সার্কিট তৈরির কথাও চিন্তা করতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক হয়, জম্বুদ্বীপে একটি জেটি, একটি শৌচাগার এবং একটি ফুড কোর্ট তৈরি করা হবে। সঙ্গে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য কিছু হরিণও ছাড়া হবে। পরিকল্পনা এগোয় অনেকটাই। রাজ্য স্তরে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়। পরে নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে ২ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকাও পায় জিবিডিএ।
কিন্তু তা কাজে লাগছে না। কারণ, ২০১৬ সালে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকল্পে ছাড় দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অনুমোদন চাওয়া হয়। সূত্রের খবর, সমুদ্রের অনেকটাই গভীরে ওই দ্বীপ বলে সেখানে উপকূল নিয়ন্ত্রণ আইন মেনেই এই প্রকল্পে ছাড় দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। তাই বাধ্য হয়েই এখন টাকা ফেরত নিয়ে অন্য কোনও প্রকল্পের কাজে লাগানোর তোড়জোড় শুরু করেছে জিবিডিএ।
বঙ্কিমবাবু বলেন, ‘‘এত দিন হয়ে গেল, টাকা পড়ে রয়েছে। টাকা ফেরত নিয়ে অন্য প্রকল্পে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে আমাদের আধিকারিকেরা রাজ্য স্তরের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছেন।’’
তবে টুরিস্ট সার্কিট না হলেও হরিণ ছাড়া যেতেই পারে। গভীর অরণ্যে ৫টি হরিণ ছাড়ার কথা রয়েছে বন দফতরের। তবে তা জেটি তৈরি না করলে আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ ব্যাপারে জেলা বনাধিকারিক তৃপ্তি শাহ বলেন, ‘‘এখন ব্যাঘ্র প্রকল্প নিয়ে একটু ব্যস্ততা রয়েছে। তবে দফতরের যে রকম নির্দেশ আসবে তেমন ভাবেই আমরা কাজ করব।’’