প্রতীকী চিত্র।
গভীর রাতে আড়াই বছরের শিশুর নাকে শোলার টুকরো ঢুকে গিয়েছিল। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রাতে এলাকার একমাত্র হাসপাতাল বন্ধ। শিশুটিকে নিয়ে পরিবারের লোকজন ছুটেছিলেন স্থানীয় চিকিৎসকের বাড়িতে। চিকিৎসক অসুস্থ ছিলেন। তা ছাড়া, নাক থেকে শোলা বের করার পরিকাঠামো তাঁর বাড়িতে ছিল না বলে জানান। উত্তেজিত লোকজন চিকিৎসকের বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে শিশুটিকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে রাতেই চিকিৎসকেরা নাক থেকে শোলার টুকরো বের করেন। এ যাত্রায় শিশুটি রক্ষা পেয়েছে।
তবে গোবরডাঙায় এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাতে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে মানুষকে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। তার কারণ, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল রাতে বন্ধ থাকে। পাশাপাশি স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছ থেকেও বাসিন্দারা রাতে পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। করোনা পরিস্থিতির আগে অবশ্য রাতে চিকিৎসকেরা কমবেশি রোগী দেখতেন।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় চিকিৎসকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলেই শহরবাসী মনে করছেন। সিপিএমের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক রেখে পরিষেবা দেওয়ার। স্থানীয় চিকিৎসকদের কাজে লাগিয়ে রাতে পরিষেবার ব্যবস্থা করারও দাবি উঠেছে। গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গোবরডাঙার মানুষ রাতে আতঙ্কে থাকেন। চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পুরপ্রশাসকের কাছে আবেদন করে বলা হয়েছে, এলাকার চিকিৎসক, রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হোক। যাতে রাতে মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন।’’
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির আগে, গভীর রাতে চিকিৎসকদের বাড়িতে নিয়ে গেলে তাঁরা কমবেশি রোগী দেখতেন। এখন সেই পরিষেবাটুকুও পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসকেরা জানালেন, বাড়িতে রাতে চিকিৎসা করার পরিকাঠামো নেই। নিরাপত্তার প্রশ্নও রয়েছে। রোগীদের সঙ্গে লোকজন আসেন। তাঁরা প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় থাকেন। রাতে যে রোগী আসছেন, তিনি করোনা আক্রান্ত কিনা বোঝা সম্ভব নয়। রোগীদের সঙ্গে যাঁরা আসছেন, তাঁরা করোনার বাহক কিনা সেটাও জানা যাচ্ছে না। তা ছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে রোগী দেখাতে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীর আত্মীয়েরা দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বাড়িতে চিকিৎসা করার পরিকাঠামো নেই। সেটা থাকে নার্সিংহোম বা হাসপাতালে। কোনও রোগীকে ইঞ্জেকশন, স্যালাইন বা অক্সিজেন দিতে হবে বা সেলাই করতে হবে— সেটা বাড়িতে করা সম্ভব হয় না।’’ কোনও চিকিৎসক রোগী দেখে ওষুধ লিখে দিলেও রোগী সমস্যায় পড়েন। কারণ রাতে ওষুধের দোকান বন্ধ থাকে। শহরবাসীর অভিযোগ, এলাকায় দু’টি নার্সিংহোম আছে। কিন্তু রাতে সেখানে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের গোবরডাঙা শাখার সম্পাদক, নারায়ণচন্দ্র কর বলেন, ‘‘উপযুক্ত নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো পেলে আমি অসুস্থ অবস্থাতেও রাতে রোগী দেখতে রাজি। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের উচিত নার্সিংহোমগুলিকে রাতে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বাধ্য করা।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় চিকিৎসকদের নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক করে রাতে চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। পুরপ্রশাসক সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘স্থানীয় চিকিৎসকেরা রাজি হলে তাঁদের জন্য রাতে চিকিৎসার ন্যুনতম পরিকাঠামো আমরা তৈরি করে দেব। সেখানে অক্সিজেন, স্যালাইন ইঞ্জেকশনের ব্যবস্থা রাখা হবে— যাতে মানুষ জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু পেতে পারেন। মুমূর্ষু রোগীদের পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স করে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’
গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তি কয়েক বছর ধরে বন্ধ। আগে সেখানে ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও হত। এপ্রিল মাস থেকে জেলাপরিষদ হাসপাতালে দিনের বেলায় বহির্বিভাগ চালু করেছে। রাতে অবশ্য হাসপাতাল বন্ধ থাকে।
গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদের সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের দাবি, দ্রুত পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসাবে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে চালু করতে হবে। যত দিন তা না হচ্ছে, রাতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক রেখে পরিষেবা চালু করতে হবে।’’ বিজেপির গোরবডাঙা শহর পৌর মণ্ডলের সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাতে আমরা অসহায় অবস্থায় কাটাচ্ছি। হাসপাতাল কেন চালু হচ্ছে না, তা পুরপ্রশাসক বা রাজ্য সরকারকে উত্তর দিতে হবে।’’
পুরপ্রশাসক জানান, লকডাউনের জন্য হাসপাতালে রাতে চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা যায়নি। সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।