সন্দেশখালির কোড়াকাটি গ্রামের পথে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা। ছবি: নির্মল বসু।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বিরোধী দলের সমর্থক পরিবারের লোকজন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বললেন, ‘‘আমাদের বাড়িঘর ভেঙে লুটপাট করে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের বাঁচান।’’
শুক্রবার কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল এসেছিল উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির কোড়াকাঠি গ্রামে। কলকাতা থেকে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে ধামাখালি ফেরিঘাটে আসেন দলের সদস্যেরা। সেখান থেকে লঞ্চে সন্দেশখালি থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। ক্ষতিগ্রস্ত এবং বাড়িছাড়া বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নামের তালিকা সংগ্রহ করেন।
পরে পুলিশের দেওয়া তালিকা নিয়ে সন্দেশখালির কোড়াকাঠি পঞ্চায়েতের ঘরামিপাড়া এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। বিজেপি কর্মী মিন্টু ঘরামি, সুজয় মণ্ডল কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘‘আমাদের বাঁচান। বাড়িঘর সব ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। জিনিসপত্র, হাঁস-মুরগি, ছাগল লুট হয়ে গিয়েছে। পুকুর, ভেড়ির মাছ নিয়ে গিয়েছে। এখন আবার জরিমানা করা হচ্ছে।’’ কমিশনের সদস্যদের তাঁরা জানান, প্রাণের ভয়ে ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কয়েকদিন আগে পুলিশ বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানালেন।
গ্রামের বাসিন্দা অনামিকা মণ্ডল, মামনি মণ্ডলরাও ভুগছেন আতঙ্কে। মামনির কথায়, ‘‘ওঁরা কথা বলে চলে গেলেন। রাত হলে যদি আবার আমাদের উপরে আক্রমণ হয়, তা হলে কোথায় যাব!’’
বেলা ১১টা থেকে কয়েক ঘণ্টা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিশনের সদস্যেরা। পুলিশের দাবি, তাদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।
বিজেপির বসিরহাট জেলার সভাপতি তারক ঘোষ বলেন, ‘‘নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে আমাদের সমর্থকদের উপরে নানা ভাবে অত্যাচার করে বাড়ি ছাড়া করেছে তৃণমূল। এখনও জরিমানা, হুমকি চলছে।’’ সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘বিজেপির কিছু লোক ভোটের আগে সন্ত্রাস চালাচ্ছিল বলে ভয়ে নিজেরাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। এখন নাটক করছে। ওঁদের উপরে কেউ কোনও অত্যাচার করেনি। ওঁরা নিশ্চিন্তে গ্রামে থাকতে পারেন।’’
গোলমালের নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।