এই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ মিলেছে। ছবি: নির্মল বসু।
বাদুড়িয়ায় ইছামতী নদীর উপরে অসম্পূর্ণ সেতুর কাজ শেষ হবে কি এ বার, নতুন করে আশা করছেন স্থানীয় মানুষ
দিন কয়েক আগে মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার উন্নয়নের স্বার্থে একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন। তার মধ্যে বাদ পড়েনি সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার কথাও। বাদুড়িয়ায় ওই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করা নিয়ে এর আগে একাধিকবার পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি মিলেছে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে কাজ হয় কিনা, তা দেখার অপেক্ষায় সকলে।
২০১০ সালে বাম আমলে সূচনা হয়েছিল ইছামতীর উপরে লক্ষ্মীনাথপুরের এই সেতুর কাজ। বাদুড়িয়া পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ড ও ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী। সেতুর কাজ শেষ হলে পণ্য পরিবহণ সহজ হবে। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে পৌঁছনো যাবে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বসিরহাটের ঘোজাডাঙায়। সীমান্ত বাণিজ্যেরও সুবিধা হবে। উপকৃত হবেন কৃষিপ্রধান এলাকার মানুষ।
সেতুর অভাবে এখন এক পারের মানুষকে বসিরহাট বা তেঁতুলিয়া সেতু হয়ে ঘুরপথে পুরসভা, থানা, বিডিও, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, বিদ্যুৎ, যুবকল্যাণ, ব্লক প্রাণিস্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, মহকুমাশাসকের অফিসে যেতে হয়। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বা স্কুল পড়ুয়াদের নৌকোয় পারাপারের ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি থাকে।
জমিজট ও আর্থিক কারণে সেতুর কাজ আশি শতাংশ হওয়ার পরেও বন্ধ হয়ে আছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে। গাড়ি চলাচলের জায়গায় অনেকাংশে ঢালাইয়ের কাজ বাকি আছে। দু’দিক দিয়ে সড়কের সঙ্গে সেতুর শেষাংশ জোড়ার কাজও বাকি।
পুরপ্রশাসক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “জমিজট ছাড়িয়ে এখন সেতুর কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা। বাদুড়িয়ায় সেতু হলে বসিরহাটের পরিবর্তে বেড়াচাঁপা দিয়ে বাদুড়িয়া-কাটিয়াহাট হয়ে সোজাসুজি লরি চলে যাবে ঘোজাডাঙা সীমান্তে।” এর ফলে বসিরহাট শহরের যানজট কাটবে বলেও তাঁর বিশ্বাস। অনেকটা কম সময়ে ঘোজাডাঙায় পৌঁছলে একদিকে পরিবহণ খরচ কমবে, অন্য দিকে বাদুড়িয়ায় বাণিজ্যের চেহারারও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন অনেকেই।
মুখ্যমন্ত্রী বাদুড়িয়া সেতুর অবস্থান জানতে চেয়ে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বলেছেন স্থানীয় বিধায়ক আব্দুর রহিম দিলুকে। পূর্ত ও সড়ক দফতরের আধিকারিকদের পক্ষে জানানো হয়েছে, অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক দিকে জমিজট, অন্য দিকে বরাদ্দ অর্থ না পাওয়ায় ঠিকাদার সংস্থা সরঞ্জাম নিয়ে চলে গিয়েছে।
২০২০ সালে অগস্ট থেকে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ শুরু হয়েছে। অনেকে চেক পেয়ে গেলেও এখনও অনেকে তাঁদের প্রাপ্য পাননি বলে অভিযোগ। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ব্লক আধিকারিক কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত বলেন, “এলাকার প্রায় সকলেই সেতুর রাস্তার জন্য জমি দিতে রাজি। আমাদের পক্ষে ৬০০ প্লটের নথি জেলা পরিষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় আইনজীবী গুরুপদ দাস বলেন, “বাদুড়িয়া শহরের দিকের সেতুর রাস্তার জন্য ইতিমধ্যে ১৩৪টি জমি রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে।” ইচ্ছুক জমিদাতাদের মধ্যে শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “আমার ২ কাঠা জমি সেতুর রাস্তায় পড়েছে। আমরা সকলে আলোচনা করে জমি দিতে রাজি হয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে ইচ্ছুক জমিদাতাদের এখনও টাকা দেওয়া হয়নি। ফলে জমি অধিগ্রহণ করাও সম্ভব হয়নি। সে কারণেই সেতুর কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে।’’
দিলু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে বাদুড়িয়ার মানুষ খুশি। তাঁরা অধীর আগ্রহে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছেন। জমিজট প্রায় মিটে গিয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।’’