রোখা যাচ্ছে না দেদার হুকিংও

বকেয়া সাড়ে সাত কোটির বিদ্যুৎ বিল

কোথাও বিদ্যুৎ চুরি। কোথাও বকেয়া বিলের ঠেলায় ‘নাম’ কিনেছে মথুরাপুর! মথুরাপুর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, তাদের এলাকায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকি। এ ছাড়া রয়েছে দেদার হুকিং।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

মথুরাপুর শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

হুকিং জাল...। নিজস্ব চিত্র।

কোথাও বিদ্যুৎ চুরি। কোথাও বকেয়া বিলের ঠেলায় ‘নাম’ কিনেছে মথুরাপুর!

Advertisement

মথুরাপুর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, তাদের এলাকায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকি। এ ছাড়া রয়েছে দেদার হুকিং। বাড়ি বাড়ি বিদ্যুতের মিটার দেওয়া হয়েছে কিন্তু মাসের পর মাস সেখানে প্রায় কোনও ইউনিটই উঠছে না বলে জানাচ্ছে সংস্থা। বেআইনি সংযোগ কাটতে গেলে বিদ্যুৎ কর্মীদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে বকেয়া টাকা আদায় এবং হুকিং নিয়ে চিন্তায় ঘুম উড়েছে মথুরাপুর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তাদের।

বেশ কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে হুকিং বিরোধী অভিযানে গিয়ে বড়সড় বাধা পেয়েছিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই রাজ্য জুড়ে এই ধরনের অভিযানে ভাটা পড়েছে। সেই সুযোগেই বাড়ছে হুকিং এবং বিদ্যুৎ বিল না মেটানোর প্রবণতা।

Advertisement

মথুরাপুর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখান থেকে মথুরাপুর ১ ও ২ ব্লক, মন্দিরবাজার, কুলতলি ও পাথরপ্রতিমা ব্লকের একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। বাড়ি বাড়ি ছাড়াও সংযোগ রয়েছে প্রায় কয়েকটি পঞ্চায়েতে, পঞ্চায়েত সমিতি এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের এলাকায় বর্তমানে প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। তাদের একটি বড় অংশের দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ বিল বাকি। সব এলাকা মিলিয়ে বর্তমানে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা!

সংস্থার কর্তাদের অভিযোগ, শুধু বাড়িতে নয়, কয়েকটি পঞ্চায়েত অফিস, সরকারি আবাসনেও হুকিং করে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া, ধান ভাঙানো মেশিন, জলের পাম্প চালাতেও ভরসা হুকিং। ওই কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার হয় অনেক বেশি। বিদ্যুৎ কর্তাদের অভিযোগ, বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ কাটতে গেলে গালিগালাজ, মারধর করা হচ্ছে। এ দিকে, অতিরিক্ত ‘লোড’ পড়ে যাওয়ায় পুড়ে যাচ্ছে ট্রান্সফর্মার। একটি ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় লক্ষাধিক টাকা। সঙ্গে সঙ্গে নতুন ট্রান্সফর্মার নিয়ে আসা সম্ভব নয়। ফলে লো-ভোল্টেজ, লোডশেডিং লেগেই রয়েছে।

সম্প্রতি মথুরাপুর ১ ব্লকের লালপুর, তালুক রানাঘাটা, নালুয়া, হোগলডাঙা-সহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কয়েকশো মিটার দূরের বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং করে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। তারের জটলা দেখলে মনে হয় জাল ছড়িয়ে আছে। যে কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আবার মথুরাপুর-২ ব্লকের রায়দিঘি পঞ্চায়েতে প্রধানপাড়া, ঘোষপাড়া, বৈদ্যপাড়া, সিংহেরঘেরি, নন্দকুমারপুর গ্রামে গিয়েও একই ছবি দেখতে পাওয়া গিয়েছে।

কেন হুকিং করছেন? গ্রামবাসীদের একাংশের পাল্টা ক্ষোভ, এখনও সব জায়গার বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে হুকিং। মথুরাপুর ২ ব্লকের কয়েক জন বাসিন্দার দাবি, বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও বাড়ির কাছে বিদ্যুতের খুঁটি বসেনি। তাই দূরের খুঁটি থেকে হুকিং করে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। মথুরাপুর বিদ্যুৎ দফতরের আওতায় থাকা সব জায়গায় যে বিদ্যুতের খুঁটি বসেনি সেটা স্বীকার করে নিয়ে বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি, সব জায়গায় খুঁটি পোঁতা হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।

মথুরাপুর বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার সন্দীপ হালদারের ক্ষোভ, কয়েকটি সরকারি এবং বেসরকারি অফিসেও বিদ্যুতের বিল বাকি। সেখানে সময় মতো বিল পাঠানো হলেও টাকা মেটানো হচ্ছে না। বাড়িতে সংযোগ কাটতে গেলে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন কর্মীরা। অফিসে এসেও হুমকি চলছে। তিনি বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েতগুলিকে সময়ে বিদ্যুৎ বিলের টাকা মেটাতে বলা হয়েছে।’’ তবে কোন কোন সরকারি অফিস বকেয়া রেখেছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

হুকিং নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় হুকিং কাটতে গিয়ে এর আগে বড় গোলমাল হয়েছে। মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। তাই আমরা সাবধানে পা ফেলছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।’’

এক পুলিশ কর্তার আশ্বাস, ‘‘বিদ্যুৎ দফতর থেকে আমাদের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া হলে সহযোগিতা করি। বিষয়টি নিয়ে মথুরাপুরের বিদ্যুৎ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement