অবৈধ নির্মাণ না করার আবেদন জানিয়ে চলছে প্রচার। ছবি: নবেন্দু ঘোষ
হেমনগরের সামসেরনগর গ্রামে সুন্দরবনের জঙ্গল ঘেঁষে নদীর চর দখল করে গড়ে উঠেছে প্রচুর বেআইনি নির্মাণ। এই সামসেরনগর থেকে স্থলপথে সুন্দরবনকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারেন পর্যটকেরা। কিন্তু অভিযোগ, গত দশ বছরে এখানে নদীর চর দখল করে এত অবৈধ নির্মাণ হয়েছে, তাতে কার্যত সুন্দরবনের মুখ ঢেকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন উঠছে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। তবে সম্প্রতি পুলিশ, বন দফতর, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও সেচ দফতরের তরফে বেআইনি নির্মাণ না করার আবেদন জানিয়ে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সামসেরনগরে বনবিবি গেস্ট হাউজ় থেকে সামসেরনগর বাজার পর্যন্ত অংশে রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুড়েখালি নদী। এই নদীর এক দিকে সুন্দরবন। তবে নদীতে পলি জমে বর্তমানে সরু নালার মতো হয়ে গিয়েছে। এই নদীর চর দখল করেই সার দিয়ে একের পর এক কংক্রিটের দোকান ও বাড়ি তৈরি হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, জঙ্গলের ৮-১০ ফুটের মধ্যেই নদীর উপরে পাকা ঘর গড়ে উঠেছে।
সামসেরনগর বাজারের ব্যবসায়ী বাপি চক্রবর্তী বলেন, “এলাকায় কোনও বাজার ছিল না। তাই প্রায় কুড়ি বছর আগে এই জায়গায় নদীর চর বরাবর কিছু মাটির ছোট ঝুপড়ি দোকান তৈরি হয়েছিল। গত কয়েক বছরে একশোর বেশি দোকান গড়ে উঠেছে চর বরাবর।” স্থানীয় বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মণ্ডলের কথায়, “স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদতে এই ভাবে অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। সুন্দরবনের জঙ্গল এই অংশে একদম আড়াল হয়ে গিয়েছে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।”
সামসেরনগর হাই স্কুল থেকে সামসেরনগর বাজার পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন জায়গায়ও নদীর চরে অবৈধ নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “বিষয়টি উদ্বেগজনক। অবিলম্বে সরকারের পদক্ষেপ করা দরকার।”
স্থানীয় কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল মণ্ডল বলেন, “নতুন করে আর নদীর চরে অবৈধ নির্মাণ করতে দেওয়া হচ্ছে না।” কিন্তু অবৈধ নির্মাণ যখন হল, তখন বন দফতর, সেচ দফতর পদক্ষেপ নিল না কেন? বন দফতরের আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বসিরহাটের সেচ দফতরের আধিকারিক রানা চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করতে চাননি। হেমনগর থানার ওসি প্রশান্ত মণ্ডল জানান, এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ আসেনি। তাই পদক্ষেপ করা হয়নি।
হিঙ্গলগঞ্জের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নদীর চরে এমন নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ। দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।