সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করেছেন মৌলেরা। —ফাইল চিত্র।
জয়নগরের মোয়ার পরে এ বার জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) তকমা পেল সুন্দরবনের মধু। বছরের শুরুতেই জলপাইগুড়ির কালোনুনিয়া চাল, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমানের টাঙ্গাইল, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের গরদ এবং কোরিয়াল শাড়ির সঙ্গে জিআই তকমা পেয়েছে সুন্দরবনের মধুও। পুণের একটি সংস্থাকে হারিয়ে এই তকমা মিলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের জিআই পোর্টালে গত বুধবার থেকেই সুন্দরবনের মধুর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের তত্ত্বাবধানে সুন্দরনবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বন বিভাগের মৌলেরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করতে যান। মাসখানেক ধরে জঙ্গলে মৌচাক খুঁজে সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করেন। বন দফতর নির্দিষ্ট দামে তা মৌলেদের থেকে কিনে নেয়। সেই মধুই গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ‘মৌবন’ নামে বাজারজাত করছে। এই মধু বন উন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন কটেজ-সহ বন দফতরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র থেকে বিক্রি করা হয়।
কোভিড পরবর্তী সময়ে সুন্দরবনের মধুর চাহিদা যথেষ্ট বেড়েছে। চাহিদার কথা মাথায় রেখে মৌলেরা যাতে আরও বেশি মধু সংগ্রহ করতে উৎসাহিত হন, সে কারণে গত মরসুম থেকেই মৌলেদের বাড়তি দাম দিতে শুরু করেছে বন দফতর। গত এপ্রিলে ৭৫টি দল মধু সংগ্রহ অভিযানে গিয়েছিল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায়। ৫৭৬ জন মৌলে এক মাস ধরে দু’দফায় সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। কেজি প্রতি ৪৫-৭০ টাকা করে বাড়তি দামদেওয়া হয়েছে মৌলেদের। গত এপ্রিল মাসে সুন্দরবন থেকে প্রায় ২০মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করেছিলেন মৌলেরা।
এ বার জিআই তকমা মেলায় সুন্দরবনের মধুর চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সকলেই। খুশির হাওয়া মৌলেদের মধ্যে। সারা বছর ধরে মধুর মরসুমের দিকে বাড়তি রোজগারের আশায় তাকিয়ে থাকেন তাঁরা। গত বার মধুর দাম কিছুটা বাড়তি মেলায় খুশি হয়েছিলেন সকলে। এ বার জিআই তকমা মেলায় সেই দাম আরও বাড়বে বলেই আশা তাঁদের। সাতজেলিয়ার বাসিন্দা মাধব সর্দার, ঝড়খালির বাসিন্দা শুকদেব মণ্ডলেরা বলেন, “এ বার জিআই পেয়েছে আমাদের মধু। ফলে আরও চাহিদা বাড়বে, আরও বেশি দাম পাওয়া যাবে। কিছুটা হলেও অর্থকষ্ট কমবে।”