হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যোগেশগঞ্জ স্কুলের শিক্ষিকা মোহনী রায়। নিজস্ব চিত্র
ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন পথ দুর্ঘটনায় জখম শিক্ষিকা মোহনী রায়।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আর কয়েকদিন পরেই হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি আসতে চলেছেন হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ স্কুলের অঙ্কের দিদিমণি মোহনী। ৩ ডিসেম্বর সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে হিঙ্গলগঞ্জের লাউতলায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন মোহনী। বছর বত্রিশের ওই শিক্ষিকা অটোর ডান দিকে বসেছিলেন। হঠাৎ একটি মালবাহী গাড়ি দ্রুত গতিতে এসে মোহনীর গায়ে ধাক্কা মারে। এরপর তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়। ওই শিক্ষিকার ডান হাত ও পা ভীষণ ভাবে জখম হয়। এ ছাড়া লিভারেও গুরুতর আঘাত পান তিনি। শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন একাধিক অপারেশন করতে হবে যার জন্য কম বেশি কুড়ি লক্ষ টাকা লাগতে পারে। কিন্তু এই শিক্ষিকার পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। এই খবর পাওয়ামাত্রই বসিরহাটের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা উদ্যোগী হন। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইনে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ওই শিক্ষিকার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানাতে শুরু করেন তাঁরা।
সংবাদপত্রেও এই খবর প্রকাশিত হয়। এরপর ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ এ মোহনীর পরিচিতরা ও তাঁর সহকর্মীরা শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত একাধিক পোস্ট করতে শুরু করেন। এরপরেই বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দূর দূরান্ত থেকে চেনা অচেনা অনেক মানুষ সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্য পাঠান। কোনও কোনও অপরিচিত মানুষ মোহনীর দুর্ঘটনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে আর্থিক সাহায্য করেছেন। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোহনীর পরিবারের কাছে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য এসেছে বলে জানা গিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত মোহানীর চিকিৎসার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। আগামী শনিবার মোহনীর হাঁটুতে একটি প্লাস্টিক সার্জারি হবে। যেহেতু হাঁটুর ওপরে অনেকটা চামড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাই চিকিৎসকরা মনে করছেন প্লাস্টিক সার্জারি ছাড়া উপায় নেই। এটাতেও মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হবে বলে মনে করছে পরিবার। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মোহনীর শরীরের ডান দিকের অংশ ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ডান হাত, পা ও কাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া হাড় জোড়া লাগানোর জন্য একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে।
মোহনীর চিকিৎসার খরচ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করতে যারা উদ্যোগী হন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হিঙ্গলগঞ্জের রানিবালা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা গার্গী চন্দ। তিনি বলেন, ‘‘অনেক অচেনা অজানা মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের পোস্ট দেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। এখনও অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা সবাই চেষ্টা করছি। মোহনীর স্কুলে ফেরার অপেক্ষায় আমরা সবাই।’’
মোহনী দিদি পারমিতা বিশ্বাস রায় বলেন, ‘‘অনেক অপরিচিত মানুষদের থেকে আর্থিক সাহায্য এসেছে এবং তাঁদের শুভকামনায় মোহনী দ্রুত সুস্থ হচ্ছে। আশা করছি আগামী ১০ দিনের মধ্যে ওকে বাড়ি নিয়ে আসতে পারব। তবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন প্রায় দেড় বছর সময় লাগবে।’’ সব মিলিয়ে হাসপাতালের বিল প্রায় বাইশ লক্ষ টাকা হতে পারে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা মেটাতে যাতে কিছু সরকারি সাহায্য আসে তার জন্য এখনও চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
মোহনী বলেন, ‘‘আমি কৃতজ্ঞ যে সমস্ত মানুষ আমার জন্য এত সাহায্য ও প্রার্থনা করেছেন তাঁদের কাছে। আমার সহকর্মীদেরও ডাক্তারবাবুদের অবদান কোনওদিন ভুলব না। অপেক্ষায় রয়েছি কবে আবার আমার ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক শেখাতে যেতে পারব।’’