পসরা সাজিয়ে। নিজস্ব চিত্র।
দিন দিন দাম বাড়ছে আনাজের। নিত্যপ্রয়োজনীয় আনাজ, যেমন আলু-পেয়াঁজ, বেগুন, কাঁচালঙ্কা কিনতে গেলেই পকেট পুড়ছে মানুষের।
ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে আনাজের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু ট্রেন চালু হওয়ার পরেও দাম কমেনি আনাজের।
রাজ্যের বিভিন্ন বাজারের আনাজের মূল উৎস হল ভাঙড়, ক্যানিং, বনগাঁ, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার-সহ দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা। মূলত ট্রেনে করেই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় আনাজ সরবরাহ করা হয়। ট্রেন বন্ধ থাকায় আনাজ গাড়ি করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছনো হত। এতে খরচ বাড়ত ব্যবসায়ীদের।
মানুষের অভিযোগ, এতদিন ট্রেন না চলায় দাম বেশি ছিল। কিন্তু এখন ট্রেন চালু হয়েছে। তা হলে আনাজের দাম কমছে না কেন?
বসিরহাটে আনাজের দাম আকাশছোঁয়া। বসিরহাট শহরে নতুন বাজার, ভ্যাবলা বাজার, মাসের বাজার, পুরাতন বাজার, কলেজ বাজার, বদরতলা বাজার-সহ বেশ কয়েকটা বাজার আছে। শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, কাঁচকলার জোড়া ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৩০ টাকা, টোম্যাটো ৮০ টাকা, আদা ১৫০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমেনি ডিমেরও। ৩০টি ডিম ১৯০ টাকায় বিকোচ্ছে বসিরহাটে। হাসনাবাদ থানার বায়লানি বাজারে আলু ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা, কুমড়ো ৩৫ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বনগাঁ মহকুমায় আনাজের দাম গত ১৫ দিনে নতুন করে বাড়েনি। বেগুন, টোম্যাটো, কুমড়োর দাম সামান্য কমেছে। শুক্রবার বনগাঁ শহরের ট বাজারে আলু ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, টোম্যাটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বনগাঁ মহাকুমা জুড়ে প্রচুর আনাজের চাষ হয়। এখানকার আনাজ স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। লকডাউনের সময় আনাজের আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে দাম কিছুটা কম ছিল।
গত দু’দিনে ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তীর বিভিন্ন বাজারে সে ভাবে আনাজের দাম কমেনি। ক্যানিং মহকুমার ওই সমস্ত বাজারের অধিকাংশ আনাজ আসে বনগাঁ থেকে। বনগাঁ-ক্যানিং ট্রেন চালু না হওয়ার আনাজের দাম একই রয়ে গিয়েছে। ক্যানিং মহাকুমার ওই সমস্ত বাজারে আলু ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, কুমড়ো ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত ১৫ দিনে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার, ভাঙড় বাজার, শোনপুর বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০ টাকা প্রতি কেজি। গত দু’দিনে দাম কমে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আলু প্রতি কেজি ৩৮ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা, কুমড়ো ৩৫ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভাঙড়ের অনাজ বিক্রেতা মিন্টু মোল্লা বলেন, ‘‘চাষিদের হাতে আলু, পেঁয়াজ নেই। স্টোরের আলু এখন বিক্রি হচ্ছে। মহারাষ্ট্র এবং নাসিক থেকে যে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে তার দাম অত্যন্ত চড়া। তার উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এই সময় আলু, পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়ে গিয়েছে। তবে আর কিছুদিনের মধ্যে শীতকালীন আনাজের জোগান বাড়বে। তখন আনাজের দাম অনেকটাই কমবে।’’ জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক তমাল দাস বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে আলু, পেঁয়াজের দাম অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে। সরকারি নির্দেশে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় কৃষি বিপণন দফতর ও সুফল বাংলার পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে।’’