ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য। নিজস্ব চিত্র
সুন্দরবনের ঝিলা ৬ নম্বর জঙ্গলে বাঘের হানায় শুক্রবার নিহত হয়েছিলেন শশাঙ্ক মণ্ডল নামে এক মৎস্যজীবী। দুর্ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মৃত শশাঙ্কের পরিবারের পাশে দাঁড়াল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। শনিবার বিকেল ৩টে নাগাদ গোসাবা বিডিও অফিসে ক্যাম্প করে শশাঙ্কের স্ত্রী সবিতার হাতে দু’লক্ষ টাকার চেক ও বিভিন্ন সাহায্য-সামগ্রী তুলে দেন জেলাশাসক পি উলগানাথন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর, ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক রবিপ্রকাশ মিনা, গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র প্রমুখ।
বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারানো মৎস্যজীবীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। তবে মাছ-কাঁকড়া ধরার অনুমতি থাকলেই কেবলমাত্র সরকারি সাহায্য মিলত। তা-ও ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের নানা দফতরের ঘুরতে হত বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবারের। অনুমতি না থাকলেও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি ক্ষতিপূরণ পায়, সে দাবিও দীর্ঘ দিনের।
শশাঙ্ক মণ্ডল সরকারি অনুমোদন না নিয়ে মাছ ধরতে যান বলেই বন দফতরের একটি সূত্রের খবর। তা সত্ত্বেও তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণ পেল। এবং এত দ্রুত তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল— দু’টি ঘটনাতেই বিস্মিত সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা। লকডাউন পর্বে জঙ্গলে গিয়ে বাঘের হানায় আরও অন্তত জনা ১৫ মৎস্যজীবীর মৃত্যু ঘটেছে। তাঁরা বেশিরভাগই এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি। শশাঙ্কর পরিবার যখন পেলেন, তখন বাকি পরিবারগুলির ক্ষেত্রে কী এমনই দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে, উঠছে সেই প্রশ্ন।
জেলাশাসক জানান, ‘‘সরকারি বিভিন্ন বিধিনিষেধের ফলে অনেক সময়েই আক্রান্তদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা সম্ভব হয় না। তবে জেলা প্রশাসন সর্বদা এই সমস্ত অসহায় মানুষের পাশে ছিল এবং থাকবে।”
শশাঙ্কর পরিবারকে সরকারি সাহায্য দেওয়া হলেও সুন্দরবনের যে সমস্ত এলাকায় প্রবেশে বা মাছ-কাঁকড়া ধরায় বন দফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেই এলাকায় যেতে নতুন করে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের।
পাশাপাশি মানুষের জঙ্গল-নির্ভরতা কমাতে বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করেছে জেলা প্রশাসন।
বিধায়ক বলেন, ‘‘নৌকো থেকে জঙ্গলে নেমে জাল পাতা ও কাঁকড়া ধরতে গিয়েই বিপদ সব থেকে বেশি ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
সরকারি সাহায্য পেয়ে কিছুটা হলেও ভরসা পেয়েছেন শশাঙ্কের স্ত্রী সবিতা। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীকে আর ফিরে পাব না ঠিকই, তবে এই সাহায্য কিছুটা হলেও সন্তানদের মানুষ করতে ও সংসার চালাতে সাহায্য করবে।”
দীর্ঘ দিন ধরে বাঘে, কুমিরে আক্রান্ত ও বিধবাদের কমিটি নামে একটি সংগঠন গোসাবা এলাকায় আন্দোলন করছে সরকারি ক্ষতিপূরণ ও সাহায্যের দাবিতে। কমিটির সভাপতি চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘এই সব পরিবারগুলির কথা সরকার যে ভাবছে, তাতে আমরা খুশি।”
পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, যে সব পরিবারগুলি বছরের বছর ধরে সরকারি সাহায্য পায়নি, এ বার তাদের কথাও ভেবে দেখুক সরকার। পরিবারগুলির পাশে রাজ্য সরকারের দ্রুত দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। অনেক সময়ে কাগজপত্রের জটিলতায় ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি হয়। যাঁরা বাঘের হানার মুখে পড়ে নিখোঁজ, সেই পরিবারগুলির ক্ষতিপূরণ পাওয়া আরও জটিল প্রক্রিয়া।
এ সব ক্ষেত্রে সরকার বিষয়গুলিকে মানবিক দিক থেকে বিচার করে দ্রুত নিষ্পত্তি করুক, এমনটাই চান চন্দন।