ওঝা! অবাক স্বাস্থ্য আধিকারিক

বাড়ি ফিরে নন্দরানি রক্তবমি শুরু করেন। হাত ফুলে যেতে থাকে। তখন সাপ নিয়ে কাজ করা যুক্তিবাদী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এবং মহিলাকে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিসিইউ-তে রেখে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৮:১০
Share:

ফাইল চিত্র।

ওঝার কেরামতিতে প্রায় প্রাণ হারাতে বসেছিলেন নন্দরানি বিশ্বাস। মরণাপন্ন নন্দরানিকে ক্যানিং হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় তিনি সুস্থ হন।

Advertisement

ক্যানিং হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত শনিবার বাড়ির সামনে বাগানের ঘাস পরিষ্কার করছিলেন বারুইপুরের শাসনের বাসিন্দা নন্দরানি বিশ্বাস। সেই সময় তাঁর হাতে কামড় দেয় চন্দ্রবোড়া সাপ। তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। তাঁর বাড়িতে কেউ ছিলেন না। পাশের বাড়ির দুই মহিলা তাঁকে স্থানীয় ওঝার কাছে নিয়ে যান। ওঝা বেশ কিছুক্ষণ ঝাড়ফুঁক করেন। বলেন, বিষহীন সাপে কামড়েছে। এ দিকে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়েন নন্দরানি। বেগতিক বুঝে ওঝা তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন।

বাড়ি ফিরে নন্দরানি রক্তবমি শুরু করেন। হাত ফুলে যেতে থাকে। তখন সাপ নিয়ে কাজ করা যুক্তিবাদী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এবং মহিলাকে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিসিইউ-তে রেখে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।

Advertisement

হাসপাতালের সর্পরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘‘চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমাটোটক্সিস। যা মূলত কিডনি অকেজো করে। রোগীর মূত্রত্যাগের মাত্রা বাড়তে থাকে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও আসে। একটা সময়ে মূত্রত্যাগ বন্ধ হয়ে যায়। রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।’’ তিনি আরও জানান, এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে ডায়ালিসিসের প্রয়োজন। যদিও হাসপাতালে সেই ব্যবস্থা নেই। তাই এভিএস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার উপরে নির্ভর করেই তাঁর চিকিৎসা করা হয়েছে।

নন্দরানির জামাই নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘‘শাশুড়িকে সাপে কামড়ানোর পর ওঝা ঝাড়ফুঁক করলে বেশ কিছু সময় নষ্ট হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক ও যুক্তিবাদীর প্রচেষ্টায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাপে কামড়ালে মানুষ এখনও ওঝা-গুনিনের কাছে যাচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখের। মানুষকে সচেতন করতে হবে। সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার কমাতে ক্যানিং হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ জন্য তাঁরা প্রশংসার যোগ্য।’’ তিনি আরও জানান, খুব শীঘ্রই ক্যানিং ও বারুইপুর হাসপাতালে ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা চালু হবে।

সাপে কামড়ালে ওঝা বা গুনিন নয়, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে এই মর্মে প্রচার করে আসছে ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। অবশ্য এত কিছুর পরেও এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে ওঝা-গুনিনদের প্রতি বিশ্বাস রয়েই গিয়েছে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই জরুরি চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে না। ফলে মারা যাচ্ছেন রোগী। কখনও আবার চিকিৎসা শুরু করতে অনর্থক দেরি হয়ে যাচ্ছে। সংকটজনক অবস্থা হচ্ছে রোগীর। যেমন হয়েছিল নন্দরানির।

রবিবার রাতে বাসন্তীর ২ নম্বর রানিগড়ের বাসিন্দা হাসিনা মোল্লাকে ঘুমের মধ্যে কালাচ সাপে কামড়ায়। শ্বাসকষ্ট, বুকে ও পেটে ব্যথা নিয়ে তিনি বাসন্তী হাসপাতালে ভর্তি হন। দিনপনেরো আগে তিনি সন্তান প্রসব করেছেন।

লক্ষণগুলিকে তাঁর সেই সংক্রান্ত শারীরিক দুর্বলতা ভেবেই প্রথমে চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিন্তু চিকিৎসায় সাড়া দেন না হাসিনা। চিকিৎসকেরা তখন খোঁজখবর নেন। হাসিনার পরিবারের লোকজন জানান, ঘরের মধ্যে একটি সাপকে ঘুরতে দেখেছিলেন তাঁরা।

এটা শুনে চিকিৎসকেরা সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা শুরু করেন এবং তাঁকে ক্যানিং হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে সিসিইউ-তে ভর্তি করে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। তিনি ক্রমশ
সুস্থ হন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement