প্রতীকী ছবি।
স্কুলের কিছু ছেলে নানা ঢঙে চুল কেটে আসে। মুখের পাশে কোথাও এক খাবলা চুল ঝুলে থাকে, অন্য দিক আবার এমন ছোট করে ছাঁটা, মনে হয়, ন্যাড়া হয়েছে। স্কুলের ছোট ছেলেদের চুলের এ হেন ফ্যাশন নিয়ে তিতিবিরক্ত শিক্ষকেরা। কিন্তু বারণ করলেই বা শুনছে কে! শেষমেশ প্রধান শিক্ষক নিজেই হাতে তুলে নিলেন কাঁচি। নবম শ্রেণির এক ছাত্রের কেতাদুরস্ত চুল তিনি নিজেই কেটে দিলেন।
ঘটনাটি গাইঘাটার ঝাউডাঙা সম্মিলনী হাইস্কুলের। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে বৃহস্পতিবার স্কুলে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সেখানে ছাত্রীছাত্রীরা এসেছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে, নিষেধ করা সত্ত্বেও কয়েক জন ছাত্র চুলের নানা ছাঁট দিয়ে এসেছে। ওই ছাত্রদের মধ্যে থেকে প্রধান শিক্ষক কালীরঞ্জন রায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে নিজের ঘরে ডেকে নেন। সেখানেই কাঁচি বের করে কেটে দেন চুল। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘সিনেমায় দেখেই হোক বা অন্য কোনও ভাবে প্রভাবিত হয়ে হোক— হাল ফ্যাশনের চুলের স্টাইল করছিল বেশ কিছু ছাত্র। এতে স্কুলের পঠনপাঠনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। অন্যান্য ছাত্রেরাও প্রভাবিত হচ্ছিল। বাধ্য হয়ে চুল কেটে দিয়েছি।’’ প্রধান শিক্ষকের আশা, এর ফলে ছাত্রাবস্থায় ছেলেরা আর বিচিত্র ঢঙে চুল কেটে স্কুলে আসার সাহস পাবে না।
স্কুলের ছোট ছোট ছেলেদের চুলের কায়দা কানুন দেখে বিরক্ত এক প্রধান শিক্ষক এলাকার সেলুনগুলির কাছে গিয়ে অনুরোধ করে এসেছিলেন, তাঁরা যেন ছোট ছেলেদের অনুরোধ মেনে টুলের ফ্যাশন না করে দেয়। সেই অনুরোধে কিছুটা কাজও হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই স্কুলে। বেসরকারি বা মিশনারি স্কুলগুলিতে চুলের ছাঁটই হোক কিংবা পোশাক— কর্তৃপক্ষের কড়া নজর থাকে। সামান্য বেচাল দেখলেই শাস্তি ব্যবস্থা আছে অনেক জায়গাতেই। অভিভাবকেরাও অনেকে ছাত্র জীবনের জন্য এমন অনুশাসন জরুরি বলে মনে করেন।
গাইঘাটার ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৮০০। কয়েক মাস আগে প্রধান শিক্ষকের নজরে আসে, কিছু ছাত্র কায়দার ছাঁট দিয়ে স্কুলে আসছে। তিনি ছাত্রদের সর্তক করেন। অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে জানিয়ে দেন, ছেলেরা যেন চুলে এমন ছাঁট না দেয়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে বাড়িতে। এরপরেও জনা পঁচিশ ছাত্র চুলে কায়দা করে স্কুলে আসছিল।কারও কারও আবার চুলে বিচিত্র রং করা। শিক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, এমন স্টাইল করার জন্য বাকি জীবন পড়ে আছে। কিন্তু স্কুলে পড়াকালীন এ সব বেয়াদপি হিসাবেই গণ্য হওয়া উচিত। এতে ছাত্র জীবনের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। যা ভবিষ্যৎ জীবনে অনুশাসনহীনতার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ছাত্রদের চরিত্র গঠনে এর প্রভাব পড়তে পারে। সে জন্য প্রধঝান শিক্ষকের কড়া ব্যবস্থা খুশি অনেকেই। অভিভাবকেরাও সমর্থন জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষককে।
কয়েক জন অভিভাবক বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক উচিত কাজই করেছেন। আমরা এত দিন বার বার বলেও যা পারিনি, তা প্রধান শিক্ষক করে দেখিয়েছেন। এর ফলে সমস্ত ছেলেরা সচেতন হবে।’’
মনোবিদেরা বলছেন, উঠতি বয়সে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা দেখানোর চেষ্টা থাকে। এমন কিছু করতে চায় তারা, যাতে অন্যের চোখে পড়ে। স্বপ্নের নায়কদের অনুসরণ করার প্রবণতাও থাকে। এই মনোভাব আসলে এক ধরনের চারিত্রিক অস্থিরতারই ফসল। খেলাধুলা, গানবাজনা বা অন্য কোনও ধরনের কাজে এই বয়সে ছেলেমেয়েদের ব্যস্ত রাখতে পারলে এ ধরনের প্রবণতা কমতে পারে। তাতে পড়াশোনায় মনংসংযোগও বাড়ে।