তছনছ: ভাঙচুর চালানো হয়েছে বাড়িতে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল বনগাঁয়। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বছর সাতাশের ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর সঙ্গে এলাকারই এক তরুণীর সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সম্পর্কের জটিলতার জন্যই যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করছেন তাঁর বাড়ির লোকজন।
ঘটনা জানাজানি হতেই জনরোষ গিয়ে পড়ে তরুণীর পরিবারের উপরে। বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। তরুণীর মা-সহ পরিবারের কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবক একটি সংস্থায় চাকরি করতেন। রোজ সকালে বাড়ির পাশে মাঠে খেলাধূলা, শরীরচর্চা করতেন। এ দিন সকালে বন্ধুরা ডাকতে গিয়েছিলেন মাঠে যাওয়ার জন্য। সাড়াশব্দ মেলেনি। পরিবারের লোকজনও ডাকাডাকি করে সাড়া পাননি। ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায়, আড়ার বাঁশের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে দেহ। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছ’য়েক ধরে এলাকারই এক তরুণীর সঙ্গে যুবকের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে যুবক মনমরা হয়েছিলেন। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছিলেন না। পরিবারের সদস্যদের দাবি, তরুণীর মা যুবককে সম্পর্ক থেকে বেরোনোর জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।
যুবকের মৃত্যুর জন্য কলেজ পড়ুয়া তরুণীর মাকে দায়ী করে উত্তেজিত বাসিন্দারা তরুণীর মামার বাড়িতে হামলা চালান। মেয়ে-স্বামীকে নিয়ে সেখানেই থাকেন তরুণীর মা। অভিযোগ, তরুণীর মাকে মহিলারা ঘর থেকে বের করে পেটানো শুরু করেন। পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়। অর্ধনগ্ন অবস্থায় চুলের মুঠি ধরে টানা-হ্যাঁচড়া করা হয়। অভিযোগ, তরুণীর বৃদ্ধ দাদুকেও মারধর করা হয়েছে।
বিপদ বুঝে তরুণী আগেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। উত্তেজিত জনতা ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়।
তরুণীর মা বলেন, ‘‘রবিবার মেয়ের মোবাইল হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সূত্রে সে দিনই জানতে পারি, মেয়ের সঙ্গে ওই যুবকের সম্পর্ক আছে। যুবককে বলি, এক পাড়ার মধ্যে আমি মেয়ের বিয়ে দেব না। ছেলেটি তারপরেও ফোন করত। মা হিসেবে মেয়ের ভালমন্দ দেখা আমার কর্তব্য। যুবকের মৃত্যুর পরে আমাকে মারধর করে চুল ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছে, বাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারা হবে বলে।’’
তরুণীর মায়ের উপরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা কারণে রাগ ছিল বলে জানা গিয়েছে। যুবকের মৃত্যুর পরে সেই আগুনে ঘি পড়ে। যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মৃত্যুর পিছনে যদি কারও হাত থাকে, তা হলে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ করার দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।