নদী থেকে কচুরিপানা তুলছেন এক মহিলা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বহু বছর ধরেই নাবত্য হারিয়ে কচুরিপানায় ঢেকেছে ইছামতী নদী। এবার কচুরিপানা দিয়ে মহিলাদের হস্তশিল্পের সামগ্রী তৈরি করার প্রশিক্ষণ দিল বনগাঁ পুরসভা। পুরসভার তরফে দাবি, এতে একদিকে নদী পরিষ্কার থাকবে, অন্যদিকে মহিলারা স্বনির্ভর হয়ে উঠবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে ইছামতীতে জোয়ার ভাটা খেলত। নদীর জল স্নান করা, মাছ ধরা, চাষের কাজে ব্যবহার করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তা বন্ধ। বর্তমানে গোটা নদী ঢেকেছে কচুরিপানায়। জলের দেখা মেলে না বললেই চলে। কচুরিপানা দীর্ঘদিন জমে থেকে তা পচে নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর গভীরতা কমিয়ে দিচ্ছে। বাড়ছে জল দূষণ। তার উপর, কচুরিপানার কারণে মশা ও সাপের উপদ্রবে বেড়ে গিয়েছে এলাকায়।
সমস্যার সমাধানে কচুরিপানা দিয়ে হস্তশিল্পের সামগ্রী তৈরি করার ব্যবস্থা করল বনগাঁ পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, দিনকয়েক আগে প্রায় ৫০০ জন মহিলাকে একটি কর্মশালার মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কর্মশালার শিরোনাম ছিল, ‘‘কচুরিপানা আনবে সোনা’। প্রশিক্ষিত মহিলারা ইতিমধ্যেই কচুরিপানার ব্যাগ, ফাইল, টুপি, রাখি-সহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা শিখেছেন।
পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘কচুরিপানার সামগ্রী তৈরির মাধ্যমে আমরা মহিলাদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর করার পরিকল্পনা করেছি। এতে একদিকে নদী কচুরিপানা মুক্ত থাকবে। অন্যদিকে মহিলাদের আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।’’
কী ভাবে কাজ করবে গোটা প্রক্রিয়া?
পুরসভা কর্তৃপক্ষ জানায়, মহিলারা নিজেরাই নদী থেকে কচুরিপানা তুলে আনবেন। সেই কচুরিপানা কেজি প্রতি ৬৫ টাকায় কিনবে পুরসভা। কচুরিপানা শুকিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলাদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হবে। মহিলারা বাড়ি বসেই হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করবেন তা দিয়ে। পুরসভা সেই সামগ্রী আবার তাঁদের কাছ থেকে কিনে নেবে। বিনিময়ে টাকা দেওয়া হবে মহিলাদের। পুরসভা তা অন্যত্র বিক্রির ব্যবস্থা করবে। অর্থাৎ কচুরিপানা বিক্রি ও হস্তশিল্পের সামগ্রী বিক্রি— এই দু’ভাবে আয় করার সুযোগ পাবেন মহিলারা।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সামগ্রীর বিপুল চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠান থেকে বরাত আসতে শুরু করেছে। সামনেই রাখিপূর্ণিমা। ওই উৎসবকে কেন্দ্র করে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি রাখির চাহিদা রয়েছে। আমরা কয়েক লক্ষ রাখি তৈরি করাচ্ছি।’’ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বুধবার পুরসভার পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলাদের হাতে শুকনো কচুরিপানা তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
আয়ের সুযোগ পেয়ে খুশি প্রশিক্ষিত মহিলারা। তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, ‘‘ঘরে বসেই টাকা রোজগারের সুযোগ মিলছে। এতে সংসার চালাতে কিছুটা সুবিধা হবে।’’ করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেকের কাজকর্ম চলে গিয়েছে, অনেক পরিবারে রুজিরোজগার কমেছে। বাড়ির মহিলারা টাকা আয়ের সুযোগ পেলে পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে বলে মনে করছে পুর কর্তৃপক্ষ।
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অতীতে প্রশাসনের তরফে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে নদী থেকে কচুরিপানা তোলানো হয়েছে। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষিপ্ত ভাবে সেচ দফতরের তরফে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও কয়েক বার কচুরিপানা তোলা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ ভাবে কচুরিপানা তোলা হলেও আখেরে লাভ হত না। কয়েক মাস পরই আবারও নদী কচুরিপানায় ভরে যেত।
এই বিষয়ে পুরপ্রধান বলেন, ‘‘ইছামতী নদীকে কচুরিপানা মুক্ত করতে আরও একটি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেটি দিয়ে আমরা কচুরিপানা তোলার কাজ শুরু করব।’’