ফেরার-পথে: মনোলতা
বিকেলে হাটে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিরাশি বছরের বৃদ্ধা মনোলতা মজুমদার। ঘটনাটি ৩১ ডিসেম্বরের। নিখোঁজ হয়ে যান। থানায় ডায়েরি হয়। হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের চেষ্টায় অবশেষে মনোলতাকে খুঁজে পেলেন পরিবারের লোকজন। শনিবার হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এসে তাঁরা বৃদ্ধাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন।
তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ির ভক্তিনগরে। হ্যাম রেডিয়ো ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে দুই যুবক বৃদ্ধাকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেন। অসুস্থ মনোলতাকে তাঁরা হাবড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁর স্মৃতিশক্তি চলে গিয়েছিল। চিকিৎসার পরে ধীরে ধীরে অনেকটা ঠিক হন। কিন্তু ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। নিজের একাধিক নাম বলছিলেন।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধা সুপারের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে একাধিকবার বলছিলেন, তাঁকে যেন বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সুপার যোগাযোগ করেন রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে। অম্বরীশ বলেন, ‘‘আমাদের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন। বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল বৃদ্ধা তাঁর নাম কখনও সোমা কখনও ঝুমা আবার কখনও শোভা বলছিলেন। বাড়ির ঠিকানা প্রথমে বলেছিলেন অসম। অসমের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের সদস্যেরা বৃদ্ধার ঠিকানা খোঁজাখুঁজি করেন।’’
রেডিয়ো ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধা পরে জানান, তাঁর বাড়ি ভক্তিহাট। গুগুলে খুঁজে এমন নাম পাওয়া যায়নি। ক্লাবের সদস্যেরা পরে জানতে পারেন, জলপাইগুড়িতে ভক্তিনগর বলে একটি এলাকা রয়েছে। বৃদ্ধা জানিয়েছিলেন, বাসে শিলিগুড়ি থেকে তাঁর বাড়ি যাওয়া যায়।
ক্লাবের সদস্যেরা ভক্তিনগর এলাকায় ঠিকানা খুঁজে পান। সেখানকার ব্লক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিস ও পুলিশ সহযোগিতা করে। অম্বরীশ বলেন, ‘‘বৃদ্ধার ছবি দেখে প্রথমে তাঁর নাতি চিনতে পারেননি। পরে অবশ্য বৃদ্ধাকে শনাক্ত করা যায়।’’
ফোনে মনোলতার ছেলে রাখাল বলেন, ‘‘তখন শীত ছিল। মা বিকেলে হাটে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এখন থেকে মাকে চোখের আড়াল হতে দেব না।’’ জানা গিয়েছে, ঝুমা, সোমা, শোভা বৃদ্ধার বন্ধু ও আত্মীয়দের নাম। অসমে তাঁদের আত্মীয় রয়েছে। বৃদ্ধার ভাইজি যমুনা এ দিন হাসপাতালে নিতে এসেছিলেন। মনোলতাকে দেখে তিনি জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন।