সেনার টুপির পালকে টান

নোটের চোট এ বার ভারতীয় সেনার টুপির পালকেও! সেনার টুপির শোভা বাড়ায় রঙিন পালক, যার পোশাকি নাম ‘হ্যাকল’। হ্যাকল তৈরির খাস জায়গা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

মগরাহাট শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৯
Share:

নোটের চোট এ বার ভারতীয় সেনার টুপির পালকেও!

Advertisement

সেনার টুপির শোভা বাড়ায় রঙিন পালক, যার পোশাকি নাম ‘হ্যাকল’। হ্যাকল তৈরির খাস জায়গা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট। নোট বাতিলের জেরে কারবার মাথায় ওঠার জোগাড় সেখানকার বাসিন্দা ফরিদা বেওয়ার।

মগরাহাট ২ ব্লকের ডিহিকলস পঞ্চায়েতের উত্তর কলসপুকুর পাড়ে হ্যাকল তৈরির কারখানা ফরিদার। আগে স্বামী ব্যবসা সামলাতেন। তাঁর মৃত্যুর পরে ফরিদাই হাল ধরেছেন। কারখানায় কাজ করেন ৭০-৮০ জন শ্রমিক। সেখান থেকে কাঁচামাল নিয়ে আশপাশের গ্রামের অনেকেও এই ব্যবসায় নেমে দু’পয়সার মুখ দেখেছেন।

Advertisement

কিন্তু কাঁচামাল কিনতে না পেরে কিছু দিন ধরে উৎপাদন এক রকম বন্ধ ফরিদার কারখানায়। শ্রমিকেরাও দিনমজুরি বা টুকটাক অন্য কাজ খুঁজে নিচ্ছেন। অন্যান্য বছর শীত পড়তেই ব্যবসা বাড়ে ফরিদার। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি বিলকুল আলাদা। ছেলে আক্রম শেখ কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের ব্যবসায় হাত লাগিয়েছেন। রাজস্থান, ওড়িশা থেকে বিশেষ প্রজাতির মুরগির পালক সংগ্রহ করে আনেন তিনি। ওই পালক ঝাড়াই-বাছাই করে রঙ করা হয়। তা দিয়েই তৈরি হয় ‘হ্যাকল।’ কয়েক হাত ঘুরে যা দেশের নানা প্রান্তে সেনাবাহিনীর কাছে পৌঁছে যায়। রঙবাহারি পালকের ঝাড়নও তৈরি হয় ফরিদার কারখানায়।

কিন্তু নোট বাতিলের পর থেকে টাকার টান পড়েছে ফরিদার। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘একে তো পাইকারি ব্যবসায়ীদের থেকে বরাত আসছে না। আবার হাতে টাকা না থাকায় কাঁচামালও তুলতে পারছি না। খুব খারাপ অবস্থা।’’

আক্রম জানালেন, ক’দিন ধরে ওড়িশা থেকে ফোন করে ব্যবসায়ীরা পালক নিয়ে যেতে বলছেন। কিন্তু সেখানে নগদেই কারবার চলে। কিন্তু কাঁচামাল তোলার মতো টাকা নেই ফরিদাদের হাতে। আক্রমের কথায়, ‘‘ক’দিন ধরে ব্যাঙ্কে যাচ্ছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কোনও কোনও দিন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। কোনও দিন আবার মিলছে দু’পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু ওই টাকা তো বাজার-হাট, সংসার খরচ চালাতেই বেরিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা হবে কোথা থেকে!’’

যে শ্রমিকেরা কাজ করতেন ফরিদার কাছে, তাঁরা সপ্তাহে দেড়-দু’হাজার টাকা মজুরি পেতেন। তাঁরাও এখন কার্যত কর্মহীন। জুলফিকার হোসেন জমাদার, আসরফ শেখরা বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে পালকের হ্যাকল ও ঝাড়ন তৈরির কাজ করে আসছি। অন্য কাজ শিখিইনি। কিন্তু এখন কারখানায় কাজ প্রায় নেই বললে চলে। বাধ্য হয়ে ধান কাটতে নেমেছি।’’

কিন্তু তাতে কি স্বস্তি মিলছে?

কোথায় আর! জুলফিকারের আক্ষেপ, ‘‘সারা দিন কাজের শেষে মালিক বলছেন, আজ খুচরো নেই, কাল দেখা যাবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement