বেআইনি: বিক্রি হচ্ছে গুটখা। নিজস্ব চিত্র
পান মশলা ও গুটখা বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য সরকার। তবে তারপরেও বহু জায়গাতেই অবাধে বিক্রি হচ্ছে এইসব নেশার দ্রব্য। অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই গুটখা বিক্রি চলছে।
শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার থেকে ভাঙড়-বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল ছোট-বড় বহু দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে পান মশলা ও গুটখা। ঢোলাহাটে স্কুলের ৫০ মিটারের মধ্যেই চোখে পড়ল পান-গুটখার দোকান। কেন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গুটখা বিক্রি হচ্ছে? ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারের এক দোকানি বলেন, ‘‘গুটখা, পান মশলা বিক্রি না করার জন্য আমাদের কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি। তাছাড়া বাজারে এইসব জিনিসের চাহিদা প্রচুর। তাই দোকানে রাখতেই হচ্ছে। প্রশাসন থেকে বারণ করা হলে বিক্রি বন্ধ করে দেব।’’ অনেক দোকানি জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞার কথা জানাই নেই তাঁদের।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেল বহু মানুষ এমনকী স্কুল, কলেজ পড়ুয়ারাও গুটখা কিনছেন। গুটখা কিনতে আসে এক যুবকের কথায়, ‘‘দিনে প্রায় কুড়ি প্যাকেট পান মশলা লাগে। এর পিছনে রোজ ২০০ টাকা খরচ হয়।’’ গুটখার খারাপ দিক সম্পর্কে ধারণাই নেই তার।
পান মশলা-গুটখায় শরীরের ক্ষতি যেমন হয়, তেমনই গুটখার পিকে নোংরা হয় পরিবেশ। সম্প্রতি ভাঙড়ের এক প্রশাসনিক ভবনে গুটখার পিক ফেলা নিয়ে গোলমাল বাধে দু’জনের মধ্যে। দোতলায় ওঠার পথে সিঁড়িতে গুটখা খেয়ে থুতু ফেলেন এক ব্যক্তি। পিছন থেকে প্রতিবাদ করেন অন্যজন। ঘটনাস্থলেই তর্কাতর্কি বেধে যায় দু’জনে। প্রতিবাদী ব্যক্তি পরে বলেন, ‘‘কাণ্ডজ্ঞানহীন কিছু মানুষের জন্য এইভাবে সরকারি ভবন নোংরা হচ্ছে। এইভাবে থুতু ফেলার ফলে দৃশ্যদূষণও বাড়ছে। কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।’’ শুধু সরকারি ভবনেই নয়, এলাকা জুড়ে বাসস্ট্যান্ড, শৌচালয়-সহ বহু জায়গাতেই চোখে পড়ল গুটখার থুতুর এই চেনা ছবি। গুটখা, পান পশলা বিক্রিতে নিয়ন্ত্রণ না এলে এই ছবি পাল্টাবে না বলেই দাবি এলাকাবাসীর।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যের কারণেও গুটখা বন্ধ হওয়া উচিৎ বলে দাবি চিকিৎসকদের। ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চপল কুমার পাণ্ডা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন খেতে খেতে মাড়িতে ঘা হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ক্যান্সার হতে পারে।’’ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সজল ঘোষ বলেন, ‘‘গুটখা খেতে খেতে ক্যান্সার হতেই পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সম্ভবনা আরও বেশি।’’
নিষেধাজ্ঞা জারির পরেও কীভাবে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পান মশলা? বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা এখনও আসেনি। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি নির্দেশ আসলে সেইমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’