বেহাল: এই অবস্থা হয়েছে গার্ডওয়াল ও রাস্তার। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র
খালের পাড়ে ধস নামায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
সোমবার ভোরে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিবালয়ে বিচারকদের আবাসনের পাশে মগরাহাট খালের পাড়ে ধস নামার কথা শুনে এলাকায় আসেন মহকুমাশাসক, বিধায়ক, পুরপ্রধান ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। খবর যায় সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। রাজীববাবু বলেন, ‘‘আমি বিশেষ কাজে বাইরে রয়েছি। জনবহুল এলাকায় খালপাড়ে ধস নামার খবর পেয়েছি। দফতরের আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।’’
ডায়মন্ড হারবারের হুগলি নদী সংযোগ ৩২ কপাট স্লুইস গেট হয়ে খালটি বয়ে গিয়েছে মহকুমার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে। পুর এলাকায় ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের টোলট্যাক্স মোড় থেকে লালপোল মোড় পর্যন্ত খাল পাড় বরাবর চওড়া পিচ রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডায়মন্ড হারবার কলেজ, পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতায়াত করেন। পাশেই জনবহুল এলাকা। এ ছাড়া, ওই রাস্তার পাশে রয়েছে জেলা ও মহকুমা বিচারকদের আবাসন, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার, প্রাণিসম্পদ দফতর, কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রের অফিস। সেখানেই কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে জেলা প্রাথমিক সাংসদের অফিস ভবন।
খাল পাড়ে পুরসভা থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ করে কংক্রিটের গার্ডওয়াল দেওয়ার কাজ শেষ হয় মাস আটেক আগে। বছর না ঘুরতেই এ দিন ভোর ৬টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পান, প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট খালপাড়ে ধস নেমেছে। পাড়-লাগোয়া বহু গাছ ঝুলে পড়েছে রাস্তার উপরে। ভোর থেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছেন ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবকী হালদার, রাজর্ষি দাস।
খবর পেয়ে বিদ্যুৎ দফতরের লোকজন এসে সরবরাহ বন্ধ করে কয়েকটি খুঁটির তার খুলে ফেলে। সরকারি আবাসন ছাড়াও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছি্ন্ন হয়ে যায়। পুলিশ এসে এক দিকে টোল ট্যাক্স মোড়ে, অন্য দিকে লালপোল মোড়ে থেকে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। খালপাড়ের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বিপজ্জনক বলে সকাল থেকে মাইকে ঘোষণা শুরু হয়। বহু লোক ভিড় করেন পরিস্থিতি দেখতে। আপাতত খালপাড়ের একাংশ দিয়ে শুধু হেঁটে যাতায়াতের জন্য বাঁশ পুঁতে ব্যারিকেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
দ্রুত সংস্কার না হলে পাড় ভেঙে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক’মাস আগে এত টাকা খরচ করে গার্ডওয়াল দেওয়া হল। অথচ এখনই এই পরিস্থিতি! গার্ডওয়াল নির্মাণের গুনমান ঠিক না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। তদন্তের দাবি তুলছেন স্থানীয় মানুষজন।
সেই সুরে সুর মিলিয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির ডায়মন্ড হারবার টাউন সহ সভাপতি সুকদেব দাসের অভিযোগ, ‘‘ঠিকাদারকে কাটমানি দিতে হয়েছে পুরপ্রধান ও কাউন্সিলরদের। ফলে কাজের গুণগত মান খারাপ হয়েছে।’’
পুরপ্রধান মীরা হালদার বলেন, ‘‘বিজেপির কয়েক জন কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অভিযোগ ঠিক নয়। সেচ দফতরের খালের পাশে আমরা গার্ডওয়াল করেছিলাম। যত দূর জানি, ঠিক ভাবেই কাজ হয়েছিল। বর্তমানে দ্রুত মেরামত শুরুর জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের বলা হয়েছে।’’
বিধায়ক দীপক হালদারের কথায়, ‘‘পুরসভা থেকে গার্ডওয়ালটি তৈরি করেছিল। তাই পুরসভা ও সেচ দফতর যাতে দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করে, সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। সেচমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’’