আক্রান্ত এএসআই মইদুল ইসলাম।—নিজস্ব চিত্র।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের ফর্ম বিলি নিয়ে শুক্রবার ফের তেতে উঠল বাসন্তী।
ফর্ম না পেয়ে বুধবারই একপ্রস্ত বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন চাষিরা। আর শুক্রবার ফর্ম বিলিকে ঘিরে দু’দফায় রীতিমতো অশান্তি বাধল তৃণমূল এবং আরএসপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। তৃণমূলের মারে তাদের ৪ জন জখম হন বলে আরএসপি-র অভিযোগ। ভাঙচুর চালানো হয় আরএসপি-র একটি দলীয় কার্যালয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে প্রহৃত হন চার পুলিশকর্মীও। তৃণমূলও আরএসপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা মারধরের অভিযোগ তুলেছে।
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের রাজ্য সরকার বিঘাপ্রতি ১৮০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকে কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিকের দফতর থেকে ক্ষতিপূরণের ফর্ম বিলি শুরু হয় গত ১৮ অগস্ট। ব্লক কৃষি সম্প্রসারণ দফতরগুলিতে প্রথম দিকে ফর্ম নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ছিল। তার জেরে বিশৃঙ্খলাও হয়। দিন কয়েক আগে সেই বিশৃঙ্খলা থামাতে জীবনতলা ও জয়নগরে পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়। জীবনতলায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ও বিডিও-র গাড়ি ভাঙচুর হয়। ইটের ঘায়ে তিন পুলিশকর্মী জখম হন। এর পরেই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতিটি পঞ্চায়েতে নির্দিষ্ট দিন ধার্য করে ফর্ম বিলি করা হবে।
সেই সিদ্ধান্ত মতোই বুধবার ফর্ম বিলি হচ্ছিল বাসন্তী রামচন্দ্রখালি পঞ্চায়েতে। কিন্তু অনেকেই ফর্ম না পাওয়ায় সে দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। শুক্রবার গোলমাল হল বাসন্তী পঞ্চায়েতে। এ দিন ওই পঞ্চায়েত থেকে ফর্ম বিলি হচ্ছিল। কিন্তু আরএসপি সমর্থক বেশ কিছু চাষি ফর্ম না পেয়ে ব্লক কৃষি দফতরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। অভিযোগ, সেই সময়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা গিয়ে তাঁদের মারধর করে। স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে তখনকার মতো গোলমাল অবশ্য মিটে যায়।
ঘটনাস্থলে যান বাসন্তীর আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্কর। তিনি ফর্ম বিলি নিয়ে ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা পরিমল চাঁপাদারের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে দলীয় সমর্থক চাষিদের নিয়ে বাসন্তী বাজারে আরএসপি কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা শুরু করেন। সেই সময়ে ব্লক তৃণমূল সভাপতি মন্টু গাজির নেতৃত্বে কিছু লোক ওই কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় এবং সেখানে থাকা আরএসপি কর্মীদের মারধর করে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গিয়ে চার পুলিশকর্মী প্রহৃত হন। মইদুল ইসলাম নামে এক পুলিশ অফিসারের মাথা ফাটে। তাঁকে ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মাথায় সেলাই পড়ে। কার্যালয়ের ভিতরেই আটকে পড়েন সুভাষবাবু এবং তাঁর দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। বিশাল পুলিশ বাহিনী, র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, পুলিশের উপরে আক্রমণ হওয়ার পরে প্রতিরোধ করা হয়েছে।
তৃণমূলও ওই গোলমালের সময়ে তাদের সমর্থকদের উপরে হামলার পাল্টা অভিযোগ তুলেছে। এর পরে আবার মসজিদবাটি এলাকায় আরএসপি-র একটি পথসভাতেও তৃণমূলের হামলার অভিযোগ ওঠে। প্রহৃত হন আরএসপি-র বুথ কমিটির নেতা জয়দেব মণ্ডল এবং ননীপদ নস্কর। রড দিয়ে মেরে তাঁদের পা ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সুভাষবাবু বলেন, ‘‘চাষিদের ক্ষতিপূরণের ফর্ম নিয়ে তৃণমূল দলবাজি করছে। প্রতিবাদ করতেই তৃণমূল বেধড়ক মারধর করেছে। আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালানোর সময়ে পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।’’ অভিযোগ উড়িয়ে ব্লক তৃণমূল সভাপতি মন্টু গাজির দাবি, ‘‘ওরাই আন্দোলনের নামে আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা তসলিমা নস্কর ও প্রধান শ্রীদাম মণ্ডলকে মারধর করে। এর প্রতিবাদে আমরা মিছিল করলে ওরা দলীয় কার্যালয় থেকে লক্ষ করে ইট ছোড়ে। ওদের ছোড়া ইটে পুলিশ জখম হয়।’’