—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনার পরে দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তেও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। ওই সব কর্মসূচিতে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে একঝাঁক তরুণীকে। যাঁদের আগে কখনও সে ভাবে পথে নেমে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। আর জি কর নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যেই চলে এসেছে দুর্গা পুজো। কিন্তু তাঁদের মন ভাল নেই। পুজোয় আনন্দ করা থেকে তাঁরা নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছেন।
অন্যান্য বছরগুলিতে দুর্গা পুজোর আগে থেকেই যাবতীয় পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। পুজোর কেনাকাটা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা। হৈ-হুল্লোড় করেই কেটে যেত পুজোর ক’টা দিন। কিন্তু এ বার ওই তরুণীরা মনে করছেন, পুজোয় সেই আবেগটাই নেই। আনন্দ করতেও মন তাঁদের সায় দিচ্ছে না।
রাত দখল সহ নানা কর্মসূচিতে পথে-নামা এক তরুণীর কথায়, ‘‘আমাদেরই জেলায় একটি বাড়িতে পুজোয় প্রদীপ আলো জ্বলবে না। পরিবারের সদস্যেরা নতুন জামাকাপড়, শাড়ি কিনবেন না। প্রতিমা দেখতে যাবেন না। মেয়েকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির প্রার্থনা করবেন। সেখানে আমরা কী ভাবে আনন্দ করতে পারি!’’
অশোকনগরের বাসিন্দা তৃণাঙ্কা পোদ্দার ১৪ অগস্ট রাত দখল কর্মসূচি থেকে লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন। নাগরিক সমাজের বা মেয়েদের কর্মসূচিতে তাঁকে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে। পুজোর কথা উঠতেই বললেন, ‘‘কোনও জামাকাপড় কিনিনি। আত্মীয়-পরিজনেরা যা দিয়েছেন, দিয়েছেন। এ বার মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছেও নেই। অঞ্জলিও দেব না। পরিকল্পনা আছে, পুজোর দিনগুলিতে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি নেওয়ার।’’ যদিও অন্যান্য বছরগুলিতে পুজোয় চুটিয়ে আনন্দ করেন বলে জানালেন তৃণাঙ্কা। বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় ঘুরতে যান। অঞ্জলিও দেন। এ বার সব কিছু থেকেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন বলে জানালেন।
আর এক প্রতিবাদী তরুণী, বনগাঁর বাসিন্দা নাট্যকর্মী মৌ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুজোয় এ বার সেই আবেগ, প্রাণ নেই। চারিদিকে খুন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। পুজোর পরিবেশটা মনে হচ্ছে মৃত!’’ অন্য বছরগুলিতে মৌ পুজোর দু’মাস আগে থেকে পরিকল্পনা করেন। অনলাইনে জামাকাপড় পছন্দ করে অর্ডার দেন। কলকাতায় ঠাকুর দেখতে যান। এ বার নতুন পোশাক কেনেননি। পুজোয় কলকাতায় যাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। তবে অঞ্জলি দেবেন বলে জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোয় অঞ্জলি দেব। কারণ, দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করব, যাতে প্রকৃত অসুরেরা বধ হয়।’’
দোষীদের শাস্তির দাবিতে গোবরডাঙায় পথে নেমেছেন স্কুল শিক্ষিকা দেবযানী গঙ্গোপাধ্যায়। পুজো নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুজোয় কেনাকাটা কিছু করিনি। ছোট মেয়েটাকেও নতুন পোশাক কিনে দিইনি। আর জি করের পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটনা...। চারিদিকে বন্যা, দুর্যোগ। মন-মাথা কোনওটাই কাজ করছে না। এ বার তো দেবী দুর্গাও রাত দখল করছেন। কারণ, এ বার সাতসকালে অষ্টমীর অঞ্জলি শেষ হয়ে যাচ্ছে। অঞ্জলি দেওয়ার ইচ্ছে নেই।’’
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হওয়া অশোকনগরের বাসিন্দা মণিকা চৌধুরী জানালেন, পুজোয় নতুন পোশাক কেনা হয়নি। তবে অঞ্জলি দিয়ে দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করবেন, খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনা যেন বন্ধ হয়। আর জি কর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটনায় জড়িতদের চরম শাস্তির আর্জিও জানাবেন দেবীর কাছে।
গোপালনগরের নহাটার বাসিন্দা অনুরাধা চক্রবর্তী নৃত্যশিল্পী। আদিবাসী বাচ্চাদের ঝুমুর নাচ শেখান। আর জি কর নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নিয়মিত যোদ দিচ্ছেন। এ বার নতুন পোশাক কেনেননি। প্রতিমা দেখতেও বেরোবেন না বলে জানালেন। অনুরাধার কথায়, ‘‘এলাকার পুজো উদ্যোক্তারা নাচের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ করেন। এ বার তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেছি, কোনও অনুষ্ঠান করব না। তবে পুজোর দিনগুলিতে বাচ্চাদের নিয়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় নাচ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করব।’’