কলেজে তখনও উত্তেজনা। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘদিন পরে শুরু হয়েছে ক্লাস। সেই সঙ্গে শুরু হয়ে গেল ছাত্র বিক্ষোভের চিরাচরিত ছবিও। ভাল ভাবে ক্লাস নিতে হবে, এই দাবিতে দিনভর ছাত্রদের একাংশ বন্ধ করে রাখলেন পঠনপাঠন। অভিযোগ, ঘণ্টা দু’য়েক দরজা বন্ধ করে আটকে রাখা হল শিক্ষকদের। বন্ধ করে দেওয়া হয় পানীয় জলের লাইন, আলো-পাখা।
শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার হেলেঞ্চায় বিআর অম্বেডকর শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে। বিক্ষোভে দেখা গিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাদের। তাঁদের দাবি, কলেজ খুললেও নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। অনেক শিক্ষক কলেজে আসছেন না। এলেও সব ক্লাস করাচ্ছেন না। দু’বার এ নিয়ে অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েও সুরাহা হয়নি।
কলেজের গেটের সামনে এদিন অবস্থান-বিক্ষোভ চলাকালীন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটকে রেখে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিদ্যুৎ, পানীয় জল ও সিসি ক্যামেরাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “আটকে রাখার বিষয়টি জানি না, তবে ছাত্রেরা অবস্থান-বিক্ষোভ করেছেন।” কলেজ কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে নিয়মিত ক্লাস চালুর আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। অধ্যক্ষ বলেন, “পরিচালন কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। যাঁরা নিয়মিত আসছেন না, তাঁদের নোটিস পাঠানো হবে।” ঘটনার নিন্দা করেছে কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুটা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষকদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিন্দনীয়।’’ অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের সম্পাদক মানস জানা ঘটনার নিন্দা করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছেন। শিক্ষকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে পঠন-পাঠনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনারও দাবি তুলেছেন।
এদিনে বিক্ষোভে নেতৃত্বে দেন ছাত্র নেতা সন্তু ঢালি। তিনি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামীণ এলাকার ছেলেমেয়েরা এমনিতেই শিক্ষায় পিছিয়ে। করোনায় পড়াশোনা ধাক্কা খেয়েছে। ছাত্রেরা কেন পুরো ক্লাসের সুযোগ এখন পাবেন না?’’ বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সিসি ক্যামেরা বন্ধ করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
মূলত আংশিক সময়ের শিক্ষকদের (স্যাক্ট) বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন ছাত্রদের একাংশ। কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষকের সংখ্যা ১৫। পূর্ণ সময়ের শিক্ষক আছেন ১০ জন। অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের সহ সম্পাদক দেবাশিস আইচ জানান, সরকারি নিয়ম মোতাবেক, সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা ক্লাস করার কথা আংশিক সময়ের শিক্ষকদের। কত দিন ক’টি ক্লাস করবেন, তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। কলেজের একটি সূত্র জানাচ্ছে, করোনার আগে একটি ক্লাস ছিল ৪৫ মিনিটের। এখন সময়সীমা বাড়িয়ে ১ ঘণ্টা করা হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা করে তিনদিন ক্লাস করতে চাইছেন আংশিক সময়ের শিক্ষকেরা। অন্য দিকে, কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রদের একাংশ চাইছেন, চারদিন ক্লাস করাতে।