মর্মান্তিক: পড়ে আছে কুকুরের মৃতদেহের সারি। ডান দিকে, বাঁচানোর চেষ্টা আর একজনকে। নিজস্ব চিত্র।
ভোর বেলা লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে দেখেন, এখানে ওখানে পড়ে রয়েছে কুকুরের লাশ। কয়েকটিকে দেখা যায়, ধুঁকছে। কেউ বমি করছে।
দৃশ্য দেখে আঁতকে ওঠেন গোপালনগরের ফুলবাড়ি এলাকার মানুষ। বেলা বাড়তেই দেখা যায়, একে একে মারা গিয়েছে ১৪টি পথকুকুর। বিষ মেশানো দই খাইয়ে শনিবার রাতে তাদের মারা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে কুকুরের দেহ আগলে গোপালনগর-নিমতলা সড়ক অবরোধে শামিল হন স্থানীয় মানুষ। এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি তোলেন তাঁরা।
আধ ঘণ্টা পরে স্থানীয় চৌবেড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তপন হাজরা এবং পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। পরে গ্রামবাসীরা গোপালনগর থানায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই কুকুরগুলিকে খেতে দিতেন। অভিযোগ, শনিবার রাতে দইয়ের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে কুকুরগুলিকে খাওয়ায় এক ব্যক্তি। তাতেই মারা যায় কুকুরগুলি। গ্রামবাসীরা রবিবার সকালে দেখেন, বেশ কিছু কুকুর রাস্তায় মরে পড়ে রয়েছে। আরও কয়েকটি কুকুর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বমি করছে। রাস্তার বেশ কিছু জায়গায় কাগজের উপরে আধখাওয়া দই দেখতে পান তাঁরা।
গ্রামবাসীরা পশু চিকিৎসককে ডেকে অসুস্থ কুকুরগুলির চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসক জানান, খাবারের বিষক্রিয়া থেকেই এমনটা ঘটে থাকতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার এক ব্যক্তি প্রায়ই রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে রাস্তায় পায়চারি করে। কুকুরগুলি তাকে দেখে ডাকাডাকি করত। বিষয়টি নিয়ে সে অসন্তুষ্ট ছিল। তাকে কয়েকবার কুকুরদের দিকে তেড়ে যেতেও দেখা গিয়েছে। কুকুরদের উপরে রাগ থেকেই ওই ব্যক্তি এমন কাজ করে থাকতে পারে বলে অনুমান স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
ওই ব্যক্তির স্ত্রী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘স্বামী শনিবার সন্ধ্যা থেকে বাড়িতেই ছিলেন। ওঁকে বিষয়টি জিজ্ঞাসাও করেছিলাম। তিনি এ কাজ করেননি বলে জানিয়েছেন।’’
পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, ‘‘অসুস্থ কুকুরগুলির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৃত কুকুরগুলিতে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
গ্রামবাসীদের অনেকেই কুকুরগুলিকে ভালবাসতেন, নিয়মিত খেতে দিতেন। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘কুকুরগুলির জন্য যদি কারও অসুবিধা হয়েও থাকে, বিষয়টি এলাকায় জানানো উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনও পদক্ষেপ করা যেত। এ ভাবে খুন করা হবে কেন!’’
স্থানীয় বাসিন্দা তথা যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘পথ কুকুরগুলি রাতে নৈশপ্রহরীর কাজ করত। ওরা থাকায় আমরা নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতাম। এলাকায় চোরের উপদ্রবও সে ভাবে নেই। ওই কুকুরগুলিকে যে বা যারা খুন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।’’