মারধরের-পরে: তখন হাসপাতালে মৎস্যজীবীরা। নিজস্ব চিত্র
সুন্দরবনের নদী ও খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বনকর্মীদের হাতেই আক্রান্ত হতে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। কেড়ে নেওয়া হয়েছে মাছ ধরার সরকারি অনুমতিপত্র, জাল, নৌকো, প্রচুর টাকার কাঁকড়া।
দিন সাতেক আগে ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের নেতিধোপানি জঙ্গলের কাছে। ঘটনার কথা জানিয়ে রবিবার গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের দ্বারস্থ হন আক্রান্ত মৎস্যজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, মাছ-কাঁকড়া ধরে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে নেতিধোপানি খালে নোঙর করে রাত কাটাচ্ছিলেন কয়েক জন। সে সময়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত বিদ্যা ফরেস্টের রেঞ্জার বিশ্বজিৎ দাস ও বনকর্মী তপন নন্দীর নেতৃত্বে এক দল বনকর্মী হামলা চালান বলে অভিযোগ। নৌকো থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় আশুতোষ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ সানা, সুশান্ত সর্দার ও পিকলু বায়েন নামে চার মৎস্যজীবীকে। তাঁদের মানসিক ভাবেও অত্যাচার করা হয় বলে অভিযোগ।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ বনকর্মীরা সকলেই মদ্যপ ছিলেন। তাঁদের জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। মিথ্যা বয়ান লিখিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন ওই চার মৎস্যজীবী। আশুতোষ বলেন, “আমার বাবার সরকারি অনুমতিপত্র নিয়েই আমরা সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলাম। রাতে আচমকাই বনকর্মীরা মদ্যপ অবস্থায় এসে আমাদেরকে মারধর শুরু করে।’’ মৎস্যজীবীদের দাবি, তাঁদের উপরে দিনের পর দিন এ ধরনের নির্যাতন বেড়েই চলেছে।
যদিও মৎস্যজীবীদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে বন দফতর। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর সুধীরচন্দ্র দাস বলেন, “বনকর্মীদের বিরুদ্ধে তোলা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বনাধিকারিক অবশ্য বলেন, “জঙ্গলকে রক্ষা করার জন্যই বনকর্মীরা দিনরাত সুন্দরবনের নদী খাঁড়িতে টহলদারি করেন। কেউ আইন ভাঙলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার বন দফতরের আছে।’’
আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই কেন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। এ বিষয়ে তিনি বনমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্য বনপালের সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে দাবি করেছেন। জয়ন্ত বলেন, “যদি মৎস্যজীবীরা সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়েন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার বন দফতরের আছে ঠিকই।
কিন্তু এ ভাবে মারধর, শারীরিক নিগ্রহ ও মানসিক নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না।’’ জয়ন্তর দাবি, ঘটনার পরে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও ওই মৎস্যজীবীদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে বনমন্ত্রী ও মুখ্য বনপাল তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও দাবি বিধায়কের।