জলে ভরে গিয়েছে ফুলের খেত। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
মাঝে আর কয়েকটা দিন। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে দুর্গাপুজো। এ দিকে, বনগাঁ মহকুমায় লাফিয়ে বাড়ছে ফুলের দাম। পুজো উদ্যোক্তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। এমনিতেই আর জি কর-কাণ্ডের জেরে পুজোর আবহে বিষণ্ণতা। তার উপরে বৃষ্টিতে মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। হাজার হাজার মানুষ জলবন্দি। অনেকেরই কাজকর্ম বন্ধ। অনেক পুজো কমিটি পুজোর খরচ তুলতে হিমসিম খাচ্ছে। বিশেষ করে, সমস্যায় পড়ছেন গ্রামের ছোট পুজো উদ্যোক্তারা। এই পরিস্থিতিতে ফুলের জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করতে শুরু করেছেন অনেকে।
দিন কয়েক আগে দু’দফায় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমায় বিস্তীর্ণ ফুল খেত জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বহু জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার বনগাঁ মহকুমায় ১ হাজার ৯৪ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছিল। বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭২৬ হেক্টর জমির চাষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টিতে গাঁদা, রজনীগন্ধা, দোপাটি, বোতাম, জবা, নীলকন্ঠ, আকন্দ, ফুলের ক্ষতি হয়েছে।
গাইঘাটার ব্লকের অর্থনীতি অনেকটাই ফুল চাষের উপরে নির্ভরশীল। মহকুমার ঠাকুরনগরে আছে রাজ্যের অন্যতম বড় ফুলের বাজার। দূরদূরান্ত থেকে চাষিরা এই বাজারে ফুল এনে বিক্রি করেন। এখান থেকে ফুল কিনে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন বহু মানুষ। সনৎ মণ্ডল নামে এক যুবক ঠাকুরনগর থেকে ফুল কিনে কলকাতায় বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফুল তো বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ক্রেতারা ফুলের দাম বেশি মানতে চাইছেন না। দাম শুনে অনেকেই তেড়ে আসছেন। সোমবার রজনীগন্ধা কিনেছিলাম ১২০-১৩০ টাকায়। মঙ্গলবার সেই দাম বেড়ে হয়েছে ২৭০-২৮০ টাকা।"
কেন এই পরিস্থিতি? সনৎ বলেন, ‘‘গাছে ফুল নেই। খেত জলমগ্ন। পুজো উদ্যোক্তারা ৫-১০ হাজার টাকার যে ফুল কিনতেন, তাঁদের এ বার সেই ফুলই ২০ হাজার টাকায় কিনতে হবে।’’
গৌর সাহা নামে এক ফুল বিক্রেতা বললেন, ‘‘ফুল খেত সব জলের তলায়। ঠাকুরনগর বাজার থেকে ফুল কিনে হাওড়া সোদপুরে বিক্রি করি। আজ ফুল না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে। যে গাঁদা ফুল সোমবার ছিল ৭০-৮০ টাকা। মঙ্গলবার তা বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। ৫ হাজার টাকার ফুল কিনে নিয়ে গেলে ৩ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই লোকসান কী ভাবে সামলাব?’’
গাইঘাটার এক ফুল চাষি এ বার দু’বিঘা জমিতে দোপাটি বোতাম ফুল চাষ করেছিলেন। বৃষ্টিতে দেড় বিঘে জমির ফুল জলের তলায় চলে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ফুল চাষ করতে খরচ হয়েছিল তিরিশ হাজার টাকার মতো। এখন সবে ফুলের বাজার ভাল হওয়ায় সময়। এখনই এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হল!’’
আর এক চাষি দু’বিঘে জমিতে বাসন্তী গাঁদা ফুলের চাষ করেছিলেন। খেত এখন জলমগ্ন। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তিনি শ্রমিক লাগিয়ে যা ফুল অবশিষ্ট আছে, তা তুলে ফেলছেন।
মহকুমার বহু ফুল চাষি পুজোর আগে ফুল বিক্রি করে সেই টাকায় পুজোর কেনাকাটা সারেন। এ বার ফুল চাষে ক্ষতি তাঁদের চিন্তায় ফেলেছে। কী ভাবে সংসার চলবে, তা ভেবে শঙ্কিত ফুল চাষি, বিক্রেতারা।