গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের জন্য নিরাপত্তার নানা সামগ্রী বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু তা মানছেন না তাঁরা বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি কাকদ্বীপের ট্রলার এফবি গোবিন্দ জম্বুদ্বীপের কাছে উল্টে গিয়ে চার জন মৎস্যজীবী নিখোঁজ হন। এই ঘটনার পরে মৎস্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রত্যেকটি মৎস্য বন্দরে গিয়ে মৎস্যজীবীরা জ্যাকেট পরছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। যাঁরা পরছেন না তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নেবে দফতরে।
মৎস্যজীবীদের জন্য এ বছর থেকেই লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। একটি ট্রলারে যতজন মৎস্যজীবী থাকবেন প্রত্যেককেই ওই জ্যাকেট পরেই কাজ করতে হবে, এরকম নির্দেশই রয়েছে সরকারি তরফে। সংগঠনগুলির মাধ্যমে ট্রলার মালিকেরা মৎস্যজীবীদের লাইফ জ্যাকেট কিনেও দিচ্ছেন। কিন্তু তা পরছেন না অনেকেই বলে জানা গিয়েছে। সাম্প্রতিক ওই দুর্ঘটনার পর এরকমই নজির সামনে এসেছে। ওই ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট ছিল ঠিকই। কিন্তু কেউ তা পরেননি। এ কথা স্বীকারও করেছেন ওই ট্রলারের মালিক।
মৎস্য দফতরের ডেপুটি অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বার থেকে মৎস্যজীবীরা জ্যাকেট পরছেন কিনা তা যাচাই করতে হঠাৎ চেকিং করা হবে বন্দরগুলিতে। যদি কেউ লাইফ জ্যাকেট পরে সমুদ্রে না গেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’’ তাতে দুর্ঘটনা অনেকটা এড়ানো যাবে এবং উদ্ধারের কাজও সহজ হবে বলে মনে করছে মৎস্য দফতর।
লাইফ জ্যাকেটের সঙ্গে এ বার থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে লাইফ বয়া বা ভাসমান টিউব। কিন্তু প্রবল উত্তাল সমুদ্রে অনেক সময় ওই টিউবের চেয়েও লাইফ জ্যাকেট কাজ দেয় বেশি। তাই এই নতুন ব্যবস্থা করে মাঝ সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের লাইফ জ্যাকেট পরেই কাজ করার অভ্যাস তৈরি করতে চাইছে দফতরের কর্তারা।
আরও একটি বিপদ সঙ্কেত যন্ত্র মৎস্যজীবীদের দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় ১৫০০ এরকম যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় মৎস্যজীবীরা সেই যন্ত্র ব্যবহার করেন না। কেউ কেউ আবার তা বাড়িতে রেখেই সমুদ্রে যাচ্ছেন। এই কারণে উপকুলরক্ষী বাহিনীর কাছে উদ্ধারের জন্য খবর পৌঁছচ্ছে না। আর তা না হলে ভুল খবর পৌঁছচ্ছে। গত মাসেও এরকম একটি ঘটনায় এক ট্রলার মালিককে সাবধান করেছে দফতরের কর্তারা।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি জানান, মৎস্যজীবীদের মধ্যে জ্যাকেট পরার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বেশিরভাগ সময়ই উপকূল থানা আসে না। তাঁর কথায়, ‘‘শেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা উপকূলরক্ষী বাহিনীর সাহায্যও পাইনি।’’
এ বার জম্বুদ্বীপের কাছে ওই ট্রলারের প্রপেলার কাদায় আটকে যায়। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, অত কম গভীর জলে উদ্ধার করার মতো জলযান তাঁদের নেই। আর ফ্রেজারগঞ্জ উপকুল থানার কাছেও যে যান রয়েছে তা গভীর সমুদ্রে গিয়ে কাজ করার জন্য উপযুক্ত নয়। উদ্ধারে প্রশিক্ষিত লোকও থানার নেই বলে দাবি করেছে পুলিশ কর্তারা।
ওই চার মৎস্যজীবীকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মৎস্য দফতরের কর্তারা দাবি করছেন, লাইফ জ্যাকেট পরে থাকলে যে দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচার নিরাপত্তা থাকবে তা নয়, তবে এই জ্যাকেটে ভেসে থাকা যায়। তা ছাড়া অল্প আলোতে বা অনেক দূর থেকে জ্যাকেটটি ভেসে থাকতে দেখা যাবে। এতে উদ্ধার কাজ সহজ হয়।