নষ্ট: মরা মাছ ভেসে উঠছে। নিজস্ব চিত্র
ঘূর্ণিঝড় আমপানের প্রভাবে ক্যানিং মহকুমার গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং এলাকার বহু জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম। নদীর নোনা জল ঢুকে একদিকে যেমন গ্রামের পর গ্রাম চাষের জমি প্লাবিত হয়েছে তেমনই বিঘের পর বিঘে মিষ্টি জলের পুকুরে নোনা জল ঢুকে পড়েছে। আর সেই কারণে মাছের মড়ক শুরু হয়েছে এলাকায়। মরা মাছের গন্ধে এখন এলাকায় টেকাই দায়।
ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এই সমস্ত এলাকায় মাছ চাষ করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। একদিকে যেমন নদী তীরবর্তী বহু এলাকায় ভেড়িতে চিংড়ি, ভেটকি, পার্সের মতো নোনা জলের মাছের চাষ হয়। এই এলাকার বহু পুকুরে মিষ্টি জলের রুই, কাতলা, পুঁটি-সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ হয়। কিন্তু গত বুধবারের ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপটে ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে যায়। যার ফলে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীবাঁধ ভেঙে নদীর নোনা জল গ্রামে ঢুকে পড়ায় মিষ্টি জলের মাছের মড়ক শুরু হয়েছে। বিঘার পর বিঘা পুকুরের মাছ মরতে শুরু করেছে। আর সেই মরা মাছের গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত মানুষজনের।
এক দিকে লকডাউনের জেরে জীবিকা, কাজকর্ম, রোজগার সবই বন্ধ। পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করে গ্রামের বহু মাছচাষি টাকা রোজগার করছিলেন। যা দিয়ে তাঁদের কোনও রকমে সংসার চলছিল। কিন্তু এই ঝড়ের ধাক্কায় তা-ও শেষ হয়ে গেল বলে জানাচ্ছেন অনেকে।
চাষের জমিতে নোনাজল ঢুকে ক্ষতি হয়েছে। আবার, ঝড়ে আনাজ ধ্বংস হয়েছে। অন্য দিকে, পুকুরে নোনা জল ঢোকায় মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে লকডাউন পরিস্থতিতে কার্যত মাথায় হাত পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষের। ক্যানিংয়ের ইটখোলা পঞ্চায়েতের বক্রাবনি গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল সর্দার, নকিব মোল্লারা বলেন, “যা-ও একটু আধটু পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করে এই লকডাউনে দিন কাটাচ্ছিলাম তা-ও শেষ হয়ে গেল।’’ একই বক্তব্য বাসন্তীর ৭ নম্বর সোনাখালি এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল মণ্ডল, গোসাবার রাঙাবেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রণজিৎ গায়েনের। তাঁরা বলেন, “আমাদের কফিনে যেন শেষ পেরেকটা পুঁতে দিল এই ঘূর্ণিঝড়। এক দিকে ঘরবাড়ি সব ভেঙে গিয়েছে, অন্য দিকে পুকুরগুলো নোনাজলে ভেসে গিয়ে সব মাছ মরে গিয়েছে। কোথায় যাব, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’’