Hingalganj

পুজোর আনন্দ ভেসেছে জলে

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৯
Share:

জীবন-যেমন: এখনও এ ভাবে বাঁধের উপরে বসবাস করছেন অনেকে। নিজস্ব চিত্র

পুজোতে একটা হলেও নতুন পোশাক জুটত গ্রামের মানুষের। সেই পোশাক পরে গ্রামের দুর্গাপুজোয় অঞ্জলি দিতেন তাঁরা। তবে এ বার নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাইনারা গ্রামের কেউড়াতলি পাড়ার বেশির ভাগ মানুষ। দু’বেলা খাবারের জন্যও এখন তাঁদের লড়তে হচ্ছে। নতুন পোশাক কেনার কথা ভাবতেই পারছেন না তাঁরা।

Advertisement

আমপান এবং করোনা পরিস্থিতি তাঁদের সব কেড়েছে। এখন বেশির ভাগ মানুষের হাতে কাজ নেই। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতেই তাঁদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। এই আবহে গ্রামের ছোট্ট মন্দিরের দুর্গাপুজোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কারণ, আমপানে মন্দির ভেঙে গিয়েছিল। তা এখনও সংস্কার হয়নি। তা ছাড়া পুজো কিংবা মন্দির সংস্কারের জন্য গ্রামের মানুষ এ বার চাঁদাও দিতে পারবেন না। শেষমেশ এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই মন্দির সংস্কারের জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু পুজো হবে কিনা তা নিয়ে এখনও ধন্দে মানুষ।

কেউড়াতলি পাড়ায় প্রায় ১১২টি পরিবারের বাস। আমপানের পর নদী বাঁধেই তাঁরা বেশ কয়েক মাস ছিলেন। এখনও ৯টি পরিবার বাঁধে বাস করছেন। তাঁদের জমি, বাড়ি সব নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা বেশির ভাগ কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু এ বার নদীর নোনা জল এখনও জমিতে রয়েছে। তাই চাষ হয়নি। লকডাউনের জেরে দিনমজুরের কাজেও অনেকে যোগ দিতে পারেননি। এ ছাড়া যাঁরা বাইরের রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন তাঁরাও করোনার ভয়ে বাইরে যেতে পারেননি। ফলে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। সুমিত্রা মণ্ডল নামে ডাঁসা নদীর বাঁধের একদম পাশের এক বাসিন্দা জানান, তাঁর স্বামী পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে পোশাক বিক্রি করতেন। মাটির বাড়িতে যা পোশাক ছিল সব আমপানের রাতে ভেসে গিয়েছে। বাড়িও শেষ। তাই সরকার যে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল, তা দিয়ে ঘর ঠিক না করে, ওই টাকা ও স্বনির্ভরগোষ্ঠী থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসাটা আবার শুরু করেছেন। এখন তাঁরা ত্রিপলের ঘরে আছেন। সুমিত্রা বলেন, “সব হারিয়ে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করলাম। তবে পাড়ায় কেউ পোশাক কিনছে না। দূরে দূরে যেতে হচ্ছে। ব্যবসা ভাল চলছে না। এখন আমরা চেষ্টা করছি যাতে আমাদের ভাত জোটে। এ বার আর আমরা নতুন পোশাক পরতে পারব না।”

Advertisement

তাপসী মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা জানান, বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি ও তাঁর ছোট্ট ছেলে। তাঁর স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেই সংসার চালাতেন। এখন কাজ বন্ধ। আমপানে বাড়ির ক্ষতিও হয়েছিল। তবে এখন সংসার চালাতে হচ্ছে আমপানের ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা দিয়ে। রেশনের চাল ও ত্রাণের ডালও কিছুটা সাহায্য করছে। তাপসী বলেন, “এখন দিনে একবেলা খাওয়া জুটলে, পরের বেলা কী ভাবে খাওয়া জুটবে সেটাই চিন্তা করি। প্রতিদিন ডাল-ভাত খেতে হচ্ছে। আনাজ কিনতে পারি না। বাচ্চাটা খেতে চায় না। বাচ্চাকেও পুজোতে একটা নতুন পোশাক দেওয়া সম্ভব হবে না।”

স্বপ্না মণ্ডল বলেন, “বাড়িতে ত্রাণের মুড়ি, চিঁড়ে রয়েছে আর রেশনের চাল পাচ্ছি। তাই কোনও রকমে খাওয়া জুটছে। টাকা নেই। পুজোতে তিন মেয়েকে কিছু কিনে দিতে পারব না। স্বামী ভিনরাজ্যে কাজ করতেন। করোনার জন্য আর যেতে পারেননি।’’

একই অবস্থা এই গ্রামের বাসিন্দা টগরি মণ্ডলের। এ ছাড়া এখনও বাঁধের উপরে বাস করছেন সুসেন সর্দার, অর্জুন সর্দার, সুদর্শন সর্দার। তাঁরা বলেন, “উমা আসবেন বাপের বাড়ি। আর আমরা বাড়ি হারিয়ে বাঁধের উপরে দিন গুনছি, কবে বাড়ি ফিরব। এ বারের দুর্গাপুজো ঘিরে আমাদের আনন্দ আমপানের রাতে ডাঁসা নদীর জল ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement