Super Hot Summer

তাপপ্রবাহের জেরে বেড়েছে সেচের খরচ, বিপাকে চাষিরা 

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ। এঁদের অধিকাংশই জলসেচের জন্য স্যালো মেশিনের উপরে নির্ভর করেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:২৮
Share:

স্যালো মেশিনের সাহায্যে খেতে জল দিচ্ছেন এক চাষি। বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে উত্তর ২৪ পরগনার গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। জেলার চাষিরা জানালেন, প্রবল রোদে খেতের মাটি ফেটে গিয়েছে। আনাজ জমিতেই ঝলসে যাচ্ছে। কালবৈশাখী বা বৃষ্টির দেখা নেই। ফসল বাঁচাতে বার বার জল দিতে হচ্ছে জমিতে। চাষিদের দাবি, আগে যে আনাজ বা পাটের খেতে ৮ দিন অন্তর সেচের জল দিতে হত, এখন সেখানে ৪ দিন অন্তর জল দিতে হচ্ছে। ফলে সেচের খরচ প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ। এঁদের অধিকাংশই জলসেচের জন্য স্যালো মেশিনের উপরে নির্ভর করেন। কিছু চাষির নিজস্ব স্যালো মেশিন আছে। বাকিরা মেশিন ভাড়া করে খেতে জল দেন। কষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় রিভার পাম্প ও গভীর নলকূপের মাধ্যমেও সেচের ব্যবস্থা আছে। তবে এই সুবিধা সব চাষির কাছে নেই।

বনগাঁ মহকুমার চাঁদা এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত দাস ৩০ বছর ধরে চাষবাস করছেন। এ বার আনাজ ও পাট চাষ করেছেন। তাঁর নিজস্ব মেশিন আছে। তিনি জানালেন, মেশিন বিদ্যুৎ বা ডিজেলে চলে। ১ বিঘে জমিতে বর্ষার সময়ে সপ্তাহে ২ ঘণ্টা মেশিনের মাধ্যমে জল দিতে হয়। অন্যান্য বছর এই সময়ে সপ্তাহে ৪ ঘণ্টা করে জল দিতে হত। এ বার ১০ ঘণ্টা করে জল দিতে হচ্ছে। তাতেও আনাজ, পাট বাঁচানো যাচ্ছে না। চাষের খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মাটির তলায় ১৮-২০ ফুট নীচ থেকে জল তোলা হয় সেচের জন্য। গরমে জলস্তর নেমে গিয়েছে। তাই এখন জল উঠছে ২২-২৩ ফুট নীচ থেকে। ফলে জলের গতি কমে গিয়েছে।’’

Advertisement

বনগাঁ মহকুমার আর এক চাষি দিলীপ বিশ্বাস ৫ বিঘে জমিতে পটল, পাট, কাঁকরোল ও লাউ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার নিজস্ব স্যালো মেশিন নেই। ভাড়া করে ৪ দিন অন্তর খেতে জল দিতে হচ্ছে। ১০ ঘণ্টা মেশিন চালাতে হচ্ছে। ভাড়া ঘণ্টায় ১৫০ টাকা। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে লাভ তো দূর, চাষের খরচের টাকাও উঠবে না।’’

অশোকনগরের চণ্ডীগাছা এলাকার চাষি কবিরুল ইসলাম দেড় বিঘে জমিতে পটল চাষ করেছেন। তিনি জানালেন, তাপপ্রবাহের ফলে খেতে প্রচুর জল দিতে হচ্ছে। নিয়মিত জলসেচ করতে না পারায় ইতিমধ্যে খেতের মাটি অনেক জায়গায় ফেটে গিয়েছে। পটল গাছ মারাও যাচ্ছে। কবিরুল বলেন, ‘‘অন্যান্য বছর এই সময়ে খেতে ৭-৮ দিন অন্তর সেচের জল দিলেই হয়। এখন ৪-৫ দিন অন্তর জল দিতে হচ্ছে। আমার নিজস্ব মেশিন নেই। ভাড়া নিয়ে কাজ চালাচ্ছি। প্রচুর খরচ হচ্ছে।’’

তাঁর দাবি, সরকার থেকে স্যালো মেশিনের ব্যবস্থা করা দরকার। না হলে তাঁর মতো আরও বহু চাষি ক্ষতির মুখ পড়বেন। বসিরহাট মহকুমার চাষি হবিবর মণ্ডলও জানান, স্যালো মেশিন ভাড়া করে খেতে জল দিতে গিয়ে আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন।

জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘তীব্র রোদে জল দিলে তা দ্রুত শুকিয়ে যায়। চাষিদের উচিত, বিকেলের পরে খেতে সেচের জল দেওয়া। তা হলে জল বেশি সময় জমিতে থাকবে। আর্থিক সাশ্রয়ও হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়নি। আশা করছি, দিন সাতেকের মধ্যে বৃষ্টি নামবে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এখনই কৃষি দফতরের তরফে স্যালো মেশিন বসানোর কোনও পরিকল্পনা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement