মাথায় হাত চাষিদের 

ভাঙ্গড়ের পানাপুকুর গ্রামের আনাজ চাষি আনোয়ার আলি মোল্লা বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে ফণীর ধাক্কা কোনরকমে সামলে উঠেছিলাম।

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড় শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১৮
Share:

ক্ষতি: জলের তলায় ধানগাছ। ছবি: সুমন সাহা

কয়েক সপ্তাহ আগে অসময়ের বৃষ্টি ও ফণীর ধাক্কা সামলে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন আনাজ চাষিরা। লোকসান মেটাতে শীত আসার আগেই কোমর বেঁধে নেমেছিলেন তাঁরা। উঠতে শুরু করেছিল মরশুমের রবি শস্য। বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং-সহ রবি শস্যের ভালো দাম থাকায় চাষিরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিল বুলবুল।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, জয়নগর, কুলতলি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় শীতকালীন রবি শস্য বাঁধাকপি, ফুলকপি,পালং, ক্যাপসিকাম,লঙ্কা এবং আলু চাষ হয়। বুলবুলের তাণ্ডব ও টানা বৃষ্টির কারণে রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানালেন চাষিরা। সাগর, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, নামখানা ব্লক এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পানের বরজ আছে। বুলবুলের তাণ্ডবে ওইসব ব্লক এলাকার অধিকাংশ পান বরজ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বিঘার পর বিঘা জমির রবি শস্য, পান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের ফের মাথায় হাত। আনাজ চাষের ক্ষতির ধাক্কা কিভাবে সামলাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না চাষিরা। শুধু আনাজ চাষিরাই নন, বুলবুলের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ধান চাষিরাও। জেলার অধিকাংশ জমিতে এখনও আমন ধান রয়েছে। বেশিরভাগ জমির ধান পেকে গিয়েছিল। দিন কয়েকের মধ্যে সেই ধান কেটে গোলায় তোলার কথা ছিল। কিন্তু বুলবুলের তাণ্ডবে অধিকাংশ জমির ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় ধান গাছ জলে ডুবে গিয়েছে। বাসন্তী ব্লক এলাকার ধান চাষি সালাউদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘‘আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় ভাদ্র মাসের শেষের দিকে আমন ধান চাষ করেছিলাম। ধান প্রায় পেকে উঠেছিল। দিন কয়েকের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলার কথা ছিল। ঝড়-বৃষ্টিতে সব শেষ।’’

ভাঙ্গড়ের পানাপুকুর গ্রামের আনাজ চাষি আনোয়ার আলি মোল্লা বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে ফণীর ধাক্কা কোনরকমে সামলে উঠেছিলাম। কিন্তু বুলবুল আমাদের সব কিছু শেষ করে দিল। ধার দেনা করে দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। জমির লিজের টাকা ধরে চাষে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এখন যা অবস্থা মহাজনের টাকা কিভাবে শোধ করবো বুঝতে পারছি না। কীটনাশকের দোকানেও প্রচুর টাকা ধার রয়েছে। নতুন করে চাষ করারও সামর্থ্য নেই।’’

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ৩ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে রবি শস্য চাষ হয়েছিল। সরকারিভাবে নাম নথিভুক্ত জেলার প্রায় কুড়ি হাজার চাষী রবি শস্য চাষ করেছিলেন। এছাড়াও অনেক চাষী আছেন যারা লোকের জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন এবং বর্গাচাষী আছেন। বুলবুলের প্রভাবে এবং টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ জমির রবি শস্য এবং আমন ধান জলের তলায় ডুবে গেছে।’’

জেলার হর্টিকালচার দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে অধিকাংশ জমির রবি শস্য, পান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষি দফতরের মুখপাত্র প্রতুল দাস বলেন, ‘‘ধান, অনাজের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। অধিকাংশ জমির ধান এখনও কাটা হয়নি। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ব্লকস্তর থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে তবেই নির্দিষ্ট করে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement