ফড়ের দাপটে পটলের দর পাচ্ছেন না চাষিরা

পটলের উৎপাদন ভাল হওয়া সত্ত্বেও মুখে হাসি নেই বনগাঁর চাষিদের। পটল বিক্রি করে তাঁরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। অথচ বাজার থেকে সাধারণ মানুষকে পটল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এত ফলনের পরেও পটল চাষের খরচ ঠিকঠাক উঠবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তায় চাষিরা। কেন এই পরিস্থিতি? চাষিরা জানালেন, এক শ্রেণির ফড়ে বা দালালের জন্যই তাঁদের ওই অবস্থা। ফড়েরাই পাইকারি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০০:৫৬
Share:

মাঠ ভরা সব্জি।

পটলের উৎপাদন ভাল হওয়া সত্ত্বেও মুখে হাসি নেই বনগাঁর চাষিদের। পটল বিক্রি করে তাঁরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। অথচ বাজার থেকে সাধারণ মানুষকে পটল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এত ফলনের পরেও পটল চাষের খরচ ঠিকঠাক উঠবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তায় চাষিরা।
কেন এই পরিস্থিতি?
চাষিরা জানালেন, এক শ্রেণির ফড়ে বা দালালের জন্যই তাঁদের ওই অবস্থা। ফড়েরাই পাইকারি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁদের ঠিক করে দেওয়া দরে চাষিরা পটল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ। সমস্যা সমাধানের জন্য চাষিরা সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন।

Advertisement

বনগাঁর নতুন গ্রামের পটল চাষি সুনীত সেনের খেতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি ১৭ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন। সোম ও শুক্র বনগাঁর মতিগঞ্জ হাটে, বৃহস্পতি ও রবিবার গোপালনগর হাটে পটল নিয়ে গিয়ে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। সুনীতবাবুর কথায়, ‘‘সোমবার ২৭ কেজি পটল নিয়ে মতিগঞ্জের হাটে গিয়েছিলাম। বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ১৬২ টাকা। এ ভাবে চলতে থাকলে চাষের খরচই তো উঠবে না।’’ পটল খেতে জমে ওঠা নোংরা-আবর্জনার দিকে চেয়ে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘শ্রমিক লাগিয়ে যে পরিষ্কার করব, সেই সামর্থ্যও নেই।’’

চাষিদের দাবি, গত বছরেও এই সময়ে হাটে পটলের পাইকারি দর ছিল ১০-১২ টাকা কেজি। এ বার দর পাওয়া যাচ্ছে না। নরহরিপুরের লিয়াকত মণ্ডল তিন বিঘে জমিতে পটল চাষ করেছেন। জানালেন, বিঘে প্রতি চাষে খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তাঁর খেদ, ‘‘প্রতি কেজি পটল পাইকারি ৫-৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দিন কয়েক আগে বিক্রি হয়েছে চার টাকায়।’’

Advertisement

যদিও বনগাঁর হাটে বাজারে সাধারণ মানুষ পটল কিনছেন ১৫-২০ টাকা কেজিতে। কেন এই দামের ফারাক? লিয়াকতের অভিযোগ, ‘‘হাটে পটলের পাইকারি দর ঠিক করেন ফড়েরা। তাঁদের বেঁধে দেওয়া দরেই আমাদের বিক্রি করতে হয়। ফড়েরা আমাদের কাছ থেকে পটল কিনে কেজি প্রতি তিন টাকা বেশিতে কারবারিদের কাছে বিক্রি করছেন।’’

চাষিদের কাছ থেকে জানা গেল, ফড়েরা পটল কিনে তা বিভিন্ন সংস্থার কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন। ওই সব সংস্থার মাধ্যমে পটল রঙ হয়ে কলকাতা, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। চাষিদের দাবি, এখান থেকে বাইরের রাজ্যে ঝিঙে-পেঁপে তেমন যায় না। ফলে ফড়েরা সে সব নিয়ে তেমন উৎসাহী নন। চাষিরা তাই দাম পাচ্ছেন। যেমন, মতিগঞ্জের হাটে সোমবার ঝিঙের পাইকারি দর ছিল কেজি প্রতি ১৫ টাকা। পেঁপের কেজি প্রতি দর ছিল ১২-১৩ টাকা। কিন্তু পটলের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।

ভবানীপুর গ্রামের শৈলেন রায় জানান, এক বিঘে জমিতে পটল চাষ করেছেন তিনি। পটলের জন্য জমি তৈরি করা, সার দেওয়া, মাচা তৈরি করা, শ্রমিক খরচ মিলিয়ে বিঘে প্রতি জমিতে কুড়ি হাজার টাকার মতো খরচ হয়। কার্তিক-অঘ্রাণে তিনি পটল লাগিয়েছিলেন। চৈত্র-বৈশাখে ফলন শুরু হয়েছে। চলবে শীতের আগে পর্যন্ত। সম্প্রতি কেজি প্রতি দু’টাকা দরেও পটল বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন শৈলেনবাবু। কালিয়ানি গ্রামে অমিত মণ্ডলও দু’বিঘে জমিতে পটল লাগিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন। সব চাষিই এখন চাইছেন ফড়েদের হাত থেকে মুক্তি পেতে। লিয়াকত বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার চাষিদের জন্য অনেক কিছু করছে। আমাদের আবেদন, ফড়েদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কিছু করুক। বাজারের দামের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনুক। সরকার সরাসরি আমাদের কাছ থেকে পটল ও অন্যান্য সব্জি কেনার ব্যবস্থা করুক।’’ চাষিরা যে গত বারের থেকে কম দাম পাচ্ছেন, উপ কৃষি অধিকর্তা অরূপ দাস সে কথা মেনে নিয়েছেন। কেন এই পরিস্থিতি, তা খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক দীপককুমার সারেঙ্গি অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কৃষি বিপণন, সমবায়-সহ কয়েকটি দফতর মিলিত ভাবে একটি ব্যবস্থা হয়েছে। চাষিদের থেকে সরাসরি সব্জি কেনার কথা ভাবা হচ্ছে।’’ কিছু বৈঠকও হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর পরামর্শ, ঠিক দাম পেতে হলে চাষিদেরও স্থানীয় স্তরে সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে। তবেই ফড়েদের উৎপাত বন্ধ হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement