ফাইল চিত্র
সকাল সাড়ে ৮টা। বাসস্ট্যান্ডে অন্যান্য দিনের মতো যাত্রী তোলার কোনও হাঁকডাক নেই।
কেন?
অফিসযাত্রীরা স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখেন বাসই নেই, তো হাঁকডাক থাকবে কী করে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বাস না মেলায় অটো বা অন্য ছোট গাড়িতেই গন্তব্যে রওনা দিলেন তাঁদের কেউ-কেউ।
২১ জুলাই, তৃণমূলের ডাকা শহিদ দিবসের রাস্তাঘাটের ছবিটা এ রকমই। ক্যানিং মহকুমার ঝড়খালি-বারুইপুর, চুনোখালি-বারুইপুর, গদখালি-বারুইপুর, ক্যানিং-মধুখালি, ঘটকপুকুর-ধামাখালি, ২১৩ রুটের ঘটকপুকুর-বাবুঘাট, এসডি-৩ রুটের ঘটকপুকুর-সোনারপুর-সহ বিভিন্ন রুট থেকে অধিকাংশ বাস এ দিন তুলে নেওয়া হয়েছে। ভাঙড় থানা এলাকা থেকে বিভিন্ন রুটের শ’খানেক বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।
অফিসযাত্রী রফিকুল হক প্রতিদিন সকালে ঘটকপুকুর থেকে সোনারপুর যাওয়ার জন্য এসডি-৩ বাস ধরেন। এ দিন বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন, একটিও বাস নেই। অফিস যেতে না পেরে তিনি বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, ‘‘একট ছুটি নষ্ট হল। রোজ সাড়ে ৮টায় বেরোই। ভোগান্তি হবে জেনেই আজ বাড়তি এক ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু রুট থেকে যে সব বাসই তুলে নেওয়া হবে, কী করে বুঝব!’’ ঘটকপুকুর-সোনারপুর রুটের সভাপতি আরেফ আলি সর্দার বলেন, ‘‘আমাদের এই রুটে ২৭টি বাস চলে। শাসকদল রুট থেকে সব বাস তুলে নেয়। আমরা বলেছিলাম, অন্তত ৫টি বাস আমাদের চালাতে দেওয়া হোক। তা হলে যাত্রীদের সমস্যা কিছুটা সমাধান করা যেত।’’
প্রতিদিন ক্যানিং থেকে বারুইপুর যান ওবায়দুল্লা ইসলাম। এ দিন তিনি বাস না পেয়ে ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড থেকে অটো ধরতে যান। ক্যানিং-বারুইপুর ভাড়া ২৫ টাকা। অটোচালক হাঁকলেন ৪০ টাকা। অগত্যা ওই ভাড়াতেই রাজি হলেন যাত্রী। সাতমুখো থেকে রোজ ক্যানিংয়ে যান পম্পা হালদার। নিত্যদিনের অটো ভাড়া যেখানে ১৫ টাকা, সেখানে এ দিন তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হল ২৫ টাকা। ঘটকপুকুর-চাম্পাহাটি রুটের অটোচালক বাপি মণ্ডল বলেন, ‘‘অন্য দিন যাত্রীর জন্য দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। এমন সুযোগ তো রোজ আসে না। তার উপর এই বৃষ্টি। এই অবস্থায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি বাড়তি কিছু রোজগারের জন্যই। একদিন না হয় যাত্রীরা একটু বেশি ভাড়াই দিলেন।’’
ক্যানিংয়ের অটো ইউনিয়নের সভাপতি বুলু মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। কোনও যাত্রী বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগও করেননি। কোন অটো এমন করেছে জানিয়ে অটোর নম্বর দিলে অটো চালকের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের ফেরত দেব। প্রয়োজনে অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেব।’’
যাত্রীদের হয়রান হতে হয়েছে ডায়মন্ড হারবারেও। কলকাতা, কাকদ্বীপ, নামখানা, বকখালি পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি রুটে অন্য দিন শ’য়ে শ’য়ে বাস চলে। এ দিন সকালে ডায়মন্ড হারবার থেকে রায়দিঘিগামী গুটি কয়েক বাসের দেখা মিলল। বাকি রুটে বেসরকারি বাস প্রায় ছিল না। ঘণ্টাখানেক বাদে বাদে ভূতল পরিবহণের কিছু বাস চলেছে।