দগ্ধ: পুড়ে যাওয়া খাঁচা দেখছে এক কিশোর। রবিবার, দক্ষিণেশ্বরের বস্তিতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মিঠু নেই। কিন্তু আগুনের তাপে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া খাঁচাটা রয়ে গিয়েছে। আর তা দেখে মাঝেমধ্যেই কেঁদে উঠছেন কানাই মণ্ডল।
শনিবার রাতে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কাছে বালি ব্রিজ থেকে নামার রাস্তার পাশে থাকা ঝুপড়িতে আগুন লেগে পেশায় রাঁধুনি কানাইবাবুর পোষ্য টিয়াপাখির মতো প্রায় ২৫০ জনের শেষ সম্বলটুকুও ছাই হয়ে গিয়েছে। রবিবার সেই ধ্বংসস্তূপে বসে হা-হুতাশ করতে দেখা গেল অনেক বাসিন্দাকেই। কানাইবাবু বলেন, ‘‘আগুন সব কেড়ে নিয়েছে। অন্তত পাখিটাকেও যদি বাঁচাতে পারতাম! দু’বছর বয়স ছিল টিয়াপাখিটার। মিঠু বলে ডাকলেই সাড়া দিত। সকলে নাম ধরে ডাকত।’’
এ দিন সকাল থেকেই জলে ভেজা ছাইয়ের গাদা থেকে জমানো টাকা-পয়সা খুঁজে বার করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন মিতা সিংহ। বহু ক্ষণ খোঁজার পরে হাতে উঠে এল কয়েকটা আধপোড়া টাকা। সেগুলিকে কাপড়ের খুঁটে বেঁধে মিতা এগিয়ে গেলেন অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে। চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘জানি কোনও কাজে লাগবে না। তা-ও অনেক কষ্টে জমানো টাকা তো, তাই রেখে দিলাম। দোলে পুজো করব ভেবেছিলাম, আর হল না।’’
স্থানীয়েরা জানান, শনিবার রাতে মিতাদের ঘরের পিছন দিকের অংশে প্রথম আগুন জ্বলতে দেখা যায়। সে সময়ে তাঁরা কেউ ঘরে ছিলেন না। পাশের ঘরে তখন ছিলেন দু’হাত কাটা যুবক বাপ্পা সাউ। তিনি বলেন, ‘‘আগুন দেখে চিৎকার করে সবাইকে বলি আগে বাচ্চাদের বার করে আনতে। নিমেষের মধ্যে পরপর ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।’’ বাসিন্দারা জানান, ঘর থেকে বাচ্চা ও বয়স্কদের নিয়ে বেরিয়ে আসার পরে আর সময় পাওয়া যায়নি। ততক্ষণে আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছিল ঘুপচি ঘরগুলি। ভিতরে ঢুকতে না পারায় বার করা যায়নি গ্যাস সিলিন্ডারগুলিও। তাতেই প্রায় ৬টি সিলিন্ডার ফেটে আগুনের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। সেই তাপে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে খাট, আলমারি থেকে শুরু করে বই-খাতা, জামা-কাপড়।
শনিবার রাতেই ৫০টি ঘরের প্রায় ২৫০ বাসিন্দার থাকার জন্য স্থানীয় একটি আশ্রমের মাঠে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকার এক যুবক প্রশান্ত দাস জানান, এ দিন দুপুরে সকলের জন্য ভাত, বাঁধাকপির তরকারি, ডিমের ঝোল রান্না করা হয়েছিল। সকালেই অস্থায়ী শিবিরে এসে ঘুরে যান এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক মদন মিত্র, কামারহাটির পুর চেয়ারম্যান গোপাল সাহা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরিন্দম ভৌমিক বলেন, ‘‘অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। জামাকাপড়, চাল, জল, বিস্কুট জোগাড় করে শিবির চালাচ্ছি।’’ পড়ুয়াদের বইপত্রের বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মদনবাবু। এলাকাতেই একটি অবৈতনিক স্কুল চালান পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও বই, খাতা, জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করেছি। পড়াশোনায় কোনও সমস্যা হবে না।’’
রবিবার বিকেলে উত্তর ২৪ পরগনার ত্রাণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে বিভিন্ন সামগ্রী পাঠানো হয় দক্ষিণেশ্বরের ওই অস্থায়ী শিবিরে। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘নির্বাচনী বিধি মেনেই এতগুলি অসহায় মানুষের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘নির্বাচন বিধি মেনে সব রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে প্লাস্টিক বাদ দিয়ে এ বার ওঁদের থাকার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঘরও তৈরি করে দেওয়া হবে।’’