মৃন্ময়ী: শাস্ত্রী বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
তখনও সে ভাবে বসতি গড়ে ওঠেনি এলাকায়। জঙ্গলে ঢাকা ছিল চারপাশ। প্রায় পাঁচশো বছর আগে সেই জঙ্গল কেটেই শুরু হয়েছিল দক্ষিণ বারাসতের শাস্ত্রী বাড়ির দুর্গাপুজো। এবার ৫০৩ বছরে পড়ল এই পুজো।
গোড়ার দিকে অবশ্য ভট্টাচার্যদের পুজো হিসেবেই পরিচিত ছিল এই দুর্গোপুজো। পরে এই পরিবারের সদস্য আশুতোষ ভট্টাচার্য কলকাতার সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। তাঁর পান্ডিত্য ছড়িয়ে পড়ে দেশ জুড়ে। শাস্ত্রী উপাধি পান তিনি। সেই থেকে এই বাড়ির নাম হয় শাস্ত্রী বাড়ি। এই বাড়ির পুজোও পরিচিত হয়ে ওঠে শাস্ত্রী বাড়ির পুজো হিসেবে। পাঁচশো বছর আগে কী ভাবে, কার হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো শুরু হয়েছিল, এখনকার প্রজন্মের কেউই তা স্পষ্ট ভাবে জানেন না। তবে পরিবারের বর্তমান সদস্যরা জানান, আশুতোষ শাস্ত্রীর সময়েই পুজোর রমরমা বাড়ে।
আশুতোষের পরে তাঁর ছেলেরা পুজো চালিয়ে যান। পরে আশুতোষের এক ছেলে পশুপতির ভট্টাচার্যের বংশধরেরাই পুজোর দায়িত্ব সামলান। পশুপতির পাঁচ ছেলের মধ্যে অবশ্য চারজনেরই মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের ছেলেমেয়েরা এখন পুজোর কাজে যুক্ত। রয়েছেন পশুপতির এক ছেলে প্রবীণ নীলমণি ভট্টাচার্যও। পরিবার সূত্রের খবর, বাড়ির লোকজন অনেকেই আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। তবে পুজোর সময় মূল বাড়িতে একত্রিত হন সকলে।
পাঁচশো বছরে পুজোর রীতি নীতিতে তেমন পরিবর্তন হয়নি বলেই জানালেন শাস্ত্রী বাড়ির সদস্যরা। এখনও এই পুজোয় চালু রয়েছে পশুবলি প্রথা। নীলমণি বলেন, “রীতি মেনে মোট পাঁচটি পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। এই বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী পুরো কালো পাঁঠা বলি দিতে হয়। পাঁঠার গায়ে একটুও অন্য রঙের ছিটে থাকলে চলবে না। এছাড়াও কুমড়ো, আখও বলি হয়।”
ভোগ বিতরণও শাস্ত্রী বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট। সদস্যরা জানান, পুজোর সময় সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ভোগের ব্যবস্থা থাকে। ভোগ খেতে ভিড় করেন বহু মানুষ। আগে আমিষ ভোগের চল থাকলেও, এখন অবশ্য নিরামিষ ভোগই দেওয়া হয়।