উদ্বোধন: নাট্য বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিজস্ব চিত্র
বছর কুড়ি আগে নাট্য বিদ্যালয় তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করার পথ ছিল কঠিন। তবুও হাল ছাড়েননি গোবরডাঙার বাসিন্দা নাট্যব্যক্তিত্ব আশিস চট্টোপাধ্যায়। অবশেষে তৈরি হল নাট্য বিদ্যালয়।
নাম, শিল্পায়ন নাট্য বিদ্যালয়। রবিবার প্রজাতন্ত্র দিবসে বিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী। ছিলেন গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত।
বিদ্যালয়টি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। এখন চলছে ছাত্রছাত্রী ভর্তির প্রক্রিয়া। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পঠনপাঠন শুরু হবে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে ১ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স, এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হবে। বিদ্যালয়ে দেশের বিশিষ্ট নাট্য প্রশিক্ষকেরা পড়াবেন। নাট্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রয়েছে, নাট্য পাঠাগার, আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ, অতিথি নিবাস। নাটকের সঙ্গে আলোকসজ্জা, রূপসজ্জা, মঞ্চ ও শব্দের উপর কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হবে। স্থানীয় শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা হবে। আশিস রাজ্যের পরিচিত একজন নাট্য পরিচালক। ৪০ বছর ধরে তিনি শিল্পায়ন নাট্য সংস্থা পরিচালনা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্টুডিও থিয়েটারের ভাবনায় নাট্য বিদ্যালয় রাজ্যে এই প্রথম। সম্প্রতি গোবরডাঙার নাট্যচর্চা রাজ্য তো বটেই গোটা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এখানকার বহু তরুণ-তরুণী নাট্য কর্মে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাঁদের কাজকর্মে বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ ও স্থায়ীত্বের পরিকাঠামো নির্মাণে এই বিদ্যালয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’’ গোবরডাঙাকে বলা হয় ‘সিটি অফ থিয়েটার’। নাট্যকর্মী ও নাট্যপ্রেমীরা মনে করেন, এই বিদ্যালয় গোবরডাঙার নাট্যচর্চায় নতুন পালক যোগ করল। নন ফরম্যাল এডুকেশনের একটা কেন্দ্র হিসাবে বিদ্যালয়টি ভূমিকা পালন করবে। আশিস বলেন, ‘‘আমরা দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার আদলে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছি। ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অফ থিয়েটার স্ট্যাডি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’’
এই নাট্য বিদ্যালয় তৈরি করতে সকলেই এগিয়ে এসেছেন বলে জানান আশিস। তিনি জানান, গোবরডাঙা পুরসভা প্রথমেই এগিয়ে এসেছিল। পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত ৬ কাঠা জমি দান করেন। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ২৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। ১২ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওই টাকা যথেষ্ট ছিল না। বিদ্যালয়টি করতে ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আশিস বলেন, ‘‘কয়েকটি নাট্যদল ও কয়েকজন ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য করেছেন। আমার স্ত্রী দীপা ব্রহ্ম নিজের গয়না বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন। আমাদের নাটক দলের অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় শৌভিক সরকার প্রিয়েন্দু শেখর দাসেরা নিজের জমানো টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। এরপরও ধার দেনা করতে হয়েছিল।’’ বিদ্যালয়টি তৈরির ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী, নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু ও ন্যশনাল স্কুল অফ ড্রামার প্রশিক্ষক অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যালয়ে প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা থাকছে ৪০টি করে। ইতিমধ্যে তা প্রায় পূরণ হয়ে গিয়েছে।