নার্সিংহোমে ঢোকার মুখে ঝুলছে বিভিন্ন চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের খরচ তালিকা। কিন্তু বাস্তবে মানা হচ্ছে না সে সব, এমনটাই অভিযোগ।
অনেক সময়ে অবশ্য ‘প্যাকেজ’-এর থেকে কম খরচ নেয় নার্সিংহোম। তবে জানা গেল, ঘুরপথে ওই টাকা যাচ্ছে সেই চিকিৎসকের পকেটে, যিনি ওই নার্সিংহোমে পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রোগীকে।
টাউন হলে বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অতিরিক্ত বিল এবং পরিষেবার মান নিয়ে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই কাকদ্বীপের কয়েকটি নার্সিংহোমে গিয়ে খোঁজ মিলল নানা অনিয়মের। অভিযোগ, এই মহকুমার বিভিন্ন নার্সিংহোমে রোগী ভর্তির বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ‘কমিশন’ পান চিকিৎসকেরা। ফলে ঘুরপথে বাড়তি টাকা গুণতে হয় রোগীর আত্মীয়দের।
কাকদ্বীপের মাদার্স হোমে (পূর্বতন মাদার নার্সিংহোম) গিয়ে দেখা গেল, সেখানে দেওয়ালে আটকানো তালিকায় লেখা রয়েছে হিস্টারেকটমি (জরায়ু বাদ দেওয়ার অস্ত্রোপচার) করতে খরচ ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু ওই নার্সিংহোমের নথি থেকে দেখা গেল, সম্প্রতি ওই অস্ত্রোপচারের জন্য এক রোগীর থেকে ৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। কেন? ওই নার্সিংহোমের ম্যানেজার সুনীল খাঁড়ার দাবি, ‘‘ওই রোগী এক জন চিকিৎসকের রেফারেন্স নিয়ে এসেছিলেন। তাই আমরা কম টাকা নিয়েছি। তবে ‘রেফারেন্স’ ছাড়া কারও হিস্টারেকটমি করতে হলে ১৫ হাজার টাকাই নেওয়া হয়।’’
ওই নার্সিংহোমের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানান, ‘রেফারেন্স’ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে নার্সিংহোমের নথিতে কম টাকা খরচ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু যে চিকিৎসক ‘রেফার’ করছেন, রোগীর পরিবারকে তাঁকে আলাদা টাকা করে দিতে হয়। তবে সেই টাকার রসিদ মেলে না। এ ছাড়া, রয়েছে ওই চিকিৎসককে দেখানোর খরচ। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য খরচের তালিকা টাঙায় না নার্সিংহোম। এই মহকুমার সেবা নার্সিংহোমে সম্প্রতি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নতুন করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে খরচের তালিকা চোখে পড়ল না। ওই নার্সিংহোমের ম্যানেজার কৃষ্ণ সাউটার দাবি, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে অনেক রোগীর পরিবার টাকাই দিতে চায় না। বেশির ভাগ সময় দর কষাকষি চলে। আমরা কম টাকা নিতে বাধ্য হই। তাই খরচের তালিকা রাখা হয়নি।’’ এই নার্সিংহোমেও চিকিৎসকের ‘রেফারেন্স’ নিয়ে রোগী ভর্তির কথা শোনা গেল।
অভিযোগ রয়েছে আরও। কাকদ্বীপের প্রায় কোনও নার্সিংহোমেই প্রশিক্ষিত নার্স ও আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার) নেই। নেই রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবার সুবিধা। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাকদ্বীপের বেশির ভাগ নার্সিংহোম নানা ফিকির বের করে রোগীদের থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।
চিকিৎসকদের ভূমিকায় কোনও গোলমাল থাকলে সেগুলিও খতিয়ে দেখা হবে।’’ তিনি জানান, নার্সিংহোমগুলি স্বাস্থ্যস্বাথী প্রকল্প মানতে বাধ্য। যে নার্সিংহোম ওই প্রকল্প মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।