উপকূল এলাকায় সতর্কতামূলক প্রচার। নিজস্ব চিত্র
গত বার করোনা পর্বের মধ্যেই ধাক্কা দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। অতিমারির দ্বিতীয় তরঙ্গের মধ্যেই বুধবার সকালে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। এমন পরিস্থিতিতে ‘আমপান’-এর অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই ‘যশ’-এর মোকাবিলা করতে চলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। সে দিনের ভয়াবহ স্মৃতির কথা মাথায় রেখে ‘যশ’ এসে পৌঁছনোর আগেই সব ধরনের ব্যাবস্থা নিয়ে রাখতে চাইছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘যশ’ মোকাবিলায় অতিরিক্ত জেলাশাসক, ৩ পুলিশ জেলার সুপার, মহকুমাশাসক, বিডিও, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন জেলাশাসক পি উলগানাথন। পরিস্থিতির মোকাবিলায় জরুরি সব দফতরকেই এখন থেকে দ্রুত কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে৷ উপকূলবর্তী এলাকার সব মানুষকেই ঝড়ের আগে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তার পাশাপাশি ‘করোনা ঝড়’-এর কথা মাথায় রেখে বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্রগুলিতে কোভিড বিধি মেনে থাকার বন্দোবস্তও করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই সাগরের ১৮, কাকদ্বীপের ১০, পাথরপ্রতিমার ২০, নামখানার ১৬, মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লকের ৫, গোসাবার ১৯, বাসন্তীর ১৯ এবং কুলতলির ৮— সব মিলিয়ে মোট ১১৫টি সাইক্লোন সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং কুইক রেসপন্স টিমকে। তৈরি ফ্রেজারগঞ্জের উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্মীরাও। সুন্দরবনের নদী এবং সমুদ্র বাঁধগুলির ক্ষয়ক্ষতিও দ্রুত মেরামত করা শুরু হয়েছে। প্রতিটি ব্লককে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার, ত্রিপল-সহ সহ ত্রাণ সামগ্রী মজুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক উলগানাথন বলেন, ‘‘গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সমস্ত রকম আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে পুলিশ, উপকূলরক্ষী বাহিনী, পূর্ত, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি, সেচ ও বিদ্যুৎ দফতর সমন্বয় সাধন করে কাজ করবে।’’
দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ব্লক প্রশাসনকে। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো জেলা প্রশাসন সব ব্যবস্থা করছে। প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আমরাও প্রস্তুত। মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। সুন্দরবন উপকূল, দ্বীপাঞ্চল এবং উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ফ্লাড সেন্টার এবং স্কুলগুলিতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। মাইকিং করে মৎস্যজীবীদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকেই কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, রায়দিঘি এবং পাথরপ্রতিমার বন্দর এলাকায় জোরকদমে করা হয় মাইক-প্রচার। সমুদ্রে থাকা ট্রলারগুলি আগামী ২৩ মে-র মধ্যে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে নদী এবং সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।