ঝাঁ-চকচকে: নীল-সাদা রঙের স্কুল ভবন, ভিতরে যদিও ভাঙাচোরা অবস্থা। নিজস্ব চিত্র
ক্লাসঘরের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। স্কুলের দু’টি ভবন। দু’টিরই অবস্থা খারাপ। নামখানার নারায়ণ বিদ্যামন্দির হাইস্কুলে এই অবস্থার মধ্যেই চলছে পঠনপাঠন। এ দিকে নীল-সাদা রং করা ভবন দূর থেকে দেখলে মনে হবে দিব্যি ঝাঁ চকচকে।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, ১৯৪৯ সালে সরকারি অনুমোদন পায় স্কুল। সে সময়ে তৈরি হয়েছিল ৯টি ঘর নিয়ে তিনতলা স্কুল ভবন। বহু বছর আগে তৈরি হওয়া ভবনের কোনও সংস্কার হয়নি। মূল ভবনের পাশে একটি ভবন রয়েছে, যা দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত। এ দিকে সেখানেও ক্লাস হয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক তমালকান্তি পন্ডা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, প্রতিটা মুহূর্ত বিপদ জেনেও স্কুলে পঠনপাঠন চালাতে হচ্ছে। কচিকাঁচাদের নিয়ে বেশি ভয়। তিনতলাটি বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। উপরে কেউ না উঠে পড়ে, সব সময়ে নজরদারি রাখতে হয়। কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের সব দফতরে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।’’ দিল্লির শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নিত্যনতুন কিছু করতে পারলে তবেই সার্বিক উন্নয়ন হবে।’’স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ওই হাইস্কুলে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যা ১৫২৭ জন। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র ২৫ জন। লাগবে আরও অন্তত ৬ জন। অশিক্ষক কর্মী ৬ জন। লাগবে অন্তত আরও ২ জন। শৌচালয় রয়েছে ১০টি। কিন্তু সাইকেলে রাখার ছাউনি নেই। সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল খোলা আকাশের নীচে পড়ে থেকে নষ্ট হয়। খেলার মাঠ থাকলেও তা অপরিচ্ছন্ন। নিকাশি নালার কোনও ব্যবস্থা নেই। বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টি হলেই সারা স্কুল চত্বর জল থই থই করে। হাঁটু সমান জল ঠেলে স্কুলে ঢুকতে হয় পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ১২৫ জন। শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাদাগাদি করে বসতে হয়। স্কুলের সামনে দিয়ে বয়ে গিয়েছে নামখানা খাল। খালে বড় বড় কচুরিপানা জঙ্গলের আকার নিয়েছে। তা দিয়ে দুর্গন্ধ বেরোয়। তিনটি মাত্র নলকূপ। ছেলেমেয়েদের সেখানে লাইনে দাঁড়াতে হয়।
সমস্যার তালিকা এখানেই শেষ নয়।
স্কুলের পিছনে তিনতলা ছাত্রীনিবাস পাঁচ বছর ধরে তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে ৫০ জন থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু এত দিন কেটে গেল সরকারি ভাবে রাঁধুনি ও নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ না করায় তা চালু করা যাচ্ছে না। পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বাড়ি এবং আসবাবপত্র।
অভিভাবক কাশীনাথ মাইতি বলেন, ‘‘স্কুলের পরিকাঠামোটাই মূল সমস্যা। যে ভাবে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমন বেহাল পরিকাঠামোর মধ্যেও বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। সরকার উদ্যোগী হয়ে নতুন স্কুল ভবন তৈরি করুক।’’ একই বক্তব্য মনোতোষ গিরি নামে আর এক অভিভাবকের।
নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান চম্পা বৈরাগী বলেন, ‘‘স্কুল ভবনটির বিপজ্জনক অবস্থার কথা আমায় কেউ জানাননি। নিশ্চয়ই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। ছাত্রী আবাসন চালুর বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ওই স্কুলের শিক্ষা কর্মী সুশান্ত গিরি বলেন, ‘‘স্কুলের বেহাল পরিকাঠামোর বিষয়ে জানানো হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু কেউ কোনও উদ্যোগ করছে না।’’ এ বিষয়ে কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই স্কুলের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। ছাত্রী আবাসটি চালুর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেব। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’
স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা সমস্যার কথা জানেন। বললেন, ‘‘জেলা শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে সর্বশিক্ষা মিশনকে জানালে নিশ্চয়ই অর্থ অনুমোদন করা হবে। যদি না হয়, আমি উদ্যোগ করব।’’
কিন্তু স্কুলের আসল দায়িত্ব যে কে নেবে, তা এত জনের সঙ্গে কথা বলেও স্পষ্ট হয়নি।