n দূরবস্থা: আলু খেতে এক চাষি। কদম্বগাছিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
আমার বাড়ি বনগাঁর চাঁদা এলাকায়। প্রায় ৩০ বছর ধরে চাষবাস করছি। শীতকালে এত বৃষ্টি আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। শীতকালে অল্পস্বল্প বৃষ্টি হয় বটে, কিন্তু এ বার অসময়ে এত বৃষ্টি হবে ভাবতেও পারিনি। বৃষ্টিটা এক রকম শেষ করে দিয়ে গেল। সাড়ে ১৬ বিঘে জমিতে ধান ও আনাজ চাষ করেছিলাম। সব জলের তলায়।
গত এক বছর ধরে ব্যাঙ্কের দরজায় ঘুরেছি কৃষিঋণের জন্য। নথিপত্র ব্যাঙ্কে জমা করা আছে। ব্যাঙ্ক নানা টালবাহানা করে। বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে চাষ করেছিলাম। সব শেষ। প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি। এখন রোদ উঠলেও খেত থেকে জল সরিয়ে জমি প্রস্তুত করতে ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। ততদিনে চাষের মরসুম আর থাকবে না। সর্ষে বা শীতকালীন আনাজ চাষের মরসুম আর পাব না। আগে চাষের ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরেও চাষের মরসুম থাকত। এ বার সেই সুযোগ পেলাম না। চৈত্র মাসে পাট চাষ করা ছাড়া আর বিকল্প কিছু নেই। সাড়ে ৭ বিঘে জমিতে আমন ধান করেছিলাম। আগের বৃষ্টিতে খেতের মাটি নরম ছিল। তাই ধান কাটতে পারিনি। খেত কিছুটা শুকোনোর পরে ধান কেটেছিলাম। খেতে রাখা ছিল। ভেবেছিলাম, অল্প বৃষ্টি হবে। এত ভারী বৃষ্টি হবে বুঝিনি। কাটা ধান জলের তলায় এখন। ধান ছাড়া সর্ষে, ফুলকপি, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, পটল, আলুও নষ্ট হয়েছে। আমপানে কলা, পেঁপের ক্ষতি হলেও ছোট ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমপানের ক্ষতিপূরণ পাইনি। এ বছর কৃষকবন্ধু প্রকল্প ৫ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। আলু চাষে সরকারি ভাবে বীজ পেয়েছিলাম। সরকারি সাহায্য বলতে এই। কী ভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করব জানি না। আমার মতো পরিস্থিতি আরও অনেকের। খেতের দিকে তাকাতে পারছি না। চোখে জল চলে আসছে।