Feeding Street Dogs

পথ কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য নির্দেশিকা আদালতের

হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী পথকুকুরদের খাওয়ানো নিয়ে নির্দিষ্ট কার্যবিধি (এসওপি) তৈরি করেছে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর। এই বিষয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তারা। এই কার্যবিধি সব পুরসভাকে পাঠানো হচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:২২
Share:

এদের খাবার নিয়েই চলছে ভাবনা-চিন্তা। নিজস্ব চিত্র ।

গত বছর ২৫ ডিসেম্বরের ঘটনা। বারাসতে পথ কুকুরদের নিয়ে বনভোজনের ব্যবস্থা করেছিলেন কিছু পশুপ্রেমী মানুষ। অভিযোগ, নবপল্লি এলাকায় পথ কুকুরদের খাওয়াতে গেলে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আপত্তি তোলেন। কুকুরদের খাওয়াতে বাধা দেন। তাঁর দাবি, কুকুরদের খেতে দিলে তারা যত্রতত্র মলত্যাগ করবে। পরিবেশ নষ্ট হবে।

Advertisement

পশুপ্রেমীরা জানান, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পথ কুকুরদের খাওয়াতে গিয়ে প্রায়ই হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয় পশুপ্রেমীদের। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী পথকুকুরদের খাওয়ানো নিয়ে নির্দিষ্ট কার্যবিধি (এসওপি) তৈরি করেছে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর। এই বিষয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তারা। এই কার্যবিধি সব পুরসভাকে পাঠানো হচ্ছে।

এতে খুশি পথকুকুর নিয়ে কাজ করা মানুষজন। তাঁদেরই এক জন, বারাসতের বাসিন্দা অর্পিতা চৌধুরী। তিনি এবং আরও কয়েক জন প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর পথ কুকুরদের নিয়ে বারাসতে বনভোজনের ব্যবস্থা করেন। তা ছাড়া, নিজে নিয়মিত ৫০টি পথ কুকুরকে খাওয়ান অর্পিতা। রাজ্য সরকারের নির্দেশের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের কাছে এটা খুবই ভাল খবর। কারণ, আমার বা আমাদের মতো অনেকেরই হয় তো দৈনিক আরও বেশি পথ কুকুরদের খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য নেই। পুরসভা খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলে পথ কুকুরদের আর না অনাহারে থাকতে হবে না।" অর্পিতা জানান, তাঁরা রাস্তার পাশে থালা বা খবরের কাগজ পেতে তাতে কুকুরদের খেতে দেন। খাওয়া শেষ থালা, কাগজ তুলে নেওয়া হয়। এমনকী, জায়গাটা জল ঢেলে পরিস্কার করে দেওয়া হয়। তারপরেও কিছু মানুষের হাতে হেনস্থা হতে হয়। মারতে পর্যন্ত আসেন কেউ কেউ! অর্পিতার কথায়, "অদ্ভুত সব যুক্তি শুনতে হয়। কুকুরদের খেতে দিলে নাকি রাস্তা এঁটো হবে। তাতে নাকি শনি ঠাকুরের দৃষ্টি পড়বে!"

Advertisement

পথ কুকুরদের উপরে অত্যচার নতুন নয়। চলতি বছরেই বনগাঁর দীনবন্ধুনগর এলাকায় খাবারে কীটনাশক মিশিয়ে একটি মা কুকুর এবং তার দু’টি ছানাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। থানায় অভিযোগ করেছিলেন এক মহিলা। পুলিশ মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল। এ ছাড়াও পথ কুকুরদের মেরে ফেলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যাঁরা এই কুকুরদের খেতে দেন, তাঁরা সব মিলিয়ে মনে করছেন, পথ কুকুরদের সম্পর্কে খুবই সংবেদনশীল পদক্ষেপ করেছে আদালত।

পথ কুকুরদের নিয়ে কাজ করা বনগাঁ স্ট্রিট ডগ সংগঠনের সদস্য সোমনাথ দাস বলেন, "পথ কুকুরেরা মূলত দু'টি কারণে হিংস্র হয়ে ওঠে। এক, খাবারের অভাবে। দুই, বাচ্চাদের নিরাপত্তার অভাবের আশঙ্কায়। পথ কুকুরদের নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করলে কুকুরদের হিংস্র হওয়ার প্রবণতা কমবে।" অশোকনগরের বাসিন্দা ভাগ্যশ্রী দেব দে দীর্ঘ দিন ধরেই পথ কুকুরদের খাওয়াচ্ছেন। ২০২১ সালে এ কাজ করতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন এলাকারই কিছু মানুষের হাতে। অভিযোগ, ভাগ্যশ্রীকে লোহার রড ছুড়ে মারা হয়েছিল। একটি পথ কুকুরকে নির্মম ভাবে পেটানো হয়। ভাগ্যশ্রী গৃহশিক্ষকতা করেন। এখনও দৈনিক প্রায় ৫৭টি পথ কুকুরকে দু'বেলা খাওয়ান। তাদের নির্বীজকরণের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনও এগিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, "কিছু মানুষের আপত্তি ছিল, পথ কুকুরদের খাওয়ানো যাবে না। খেয়ে তারা যত্রতত্র মলত্যাগ করছে। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।" রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা নিয়ে তাঁর অবশ্য কিছু আশঙ্কা আছে। ভাগ্যশ্রীর কথায়, "পুরসভা হয় তো দু'দিন খাওয়াবে, তারপর বন্ধ করে দেবে। আর খাবারের পরিমাণও হয় তো কম হবে। আমাদের মতো দু'বেলা পেট ভরে কী খাওয়াবে?"

রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার কথা শুনেছেন গোবরডাঙার পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, "আমাদের এখানে ব্যক্তিগত ভাবে অনেক মানুষ পথ কুকুরদের খাওয়ান। আমার মেয়ে, স্ত্রী-ও খাওয়ান। সরকারের নির্দেশ এলে অবশ্যই পুরসভার পক্ষ থেকে পথ কুকুরদের খাওয়ানো ব্যবস্থা করব।" হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহার কথায়, "সরকারি নির্দেশ আসেনি। এখানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগত ভাবে কুকুরদের খাওয়ান। ভাল উদ্যোগে। নির্দেশ এলে অবশ্যই খাওয়াব।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement