প্রতীকী ছবি।
ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বাসিন্দারা।
বছর দু’য়েক আগে দেগঙ্গায় মহামারীর আকার নিয়েছিল ডেঙ্গি। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার। মৃত্যু হয় শতাধিক। এ বছর জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় সেই আতঙ্কও ফিরেছে। দেগঙ্গা ব্লক সূত্রের খবর, চাঁপাতলা, নুরনগরের মতো পঞ্চায়েতগুলিতে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষা নিয়ে ডেঙ্গি রোধে গত বছর আগাম ব্যবস্থা নেয় জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। ফলে গত বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে। দিন কয়েক আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রশাসনিক উদ্যোগে এখনও খামতি আছে। শীঘ্র ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। যদিও প্রশাসনের দাবি, ডেঙ্গি রুখতে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের অবশ্য অভিযোগ, মশাদমন বা এলাকা পরিষ্কারের কাজ হচ্ছে না।
সম্প্রতি দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, চিকিৎসক এবং রক্ত পরীক্ষার ঘরের সামনে জ্বরে আক্রান্তদের দীর্ঘ লাইন। তিন বছরের মেয়ে কোলে লাইনে দাঁড়িয়ে নুরনগর পঞ্চায়েতের রামনাথপুরের ভগবতী সিংহ বলেন, ‘‘মেয়ে আর আমি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছি। ওষুধেও কমছে না।’’ খেজুরডাঙার সুমি দাস জানান, তিন দিন ধরে রাত বাড়লেই জ্বর আসছে। ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য অ্যালাইজা টেস্ট করতে প্রতিবন্ধী ভাই মিরাজুল মণ্ডলকে নিয়ে এসেছিলেন মহিদুল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ ধরে জ্বর। খেলেই বমি করছে। ডাক্তারবাবু লিখে দেওয়ায় এনএস-১ পরীক্ষা করাতে এসেছি।’’
দেগঙ্গার বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘জুনের শুরু থেকেই দেগঙ্গার ১৩টি পঞ্চায়েতের ২০৭টি এলাকায় মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। জমা জল সরানো, নিকাশি সংস্কারের পাশাপাশি মশা মারতে তেল ছড়ানো হচ্ছে।’’ আট জন করে চিকিৎসক এবং নার্স, ১০৪ জন গ্রামীণ সম্পদ সদস্য, ১৯২ জন আশাকর্মী ও ৩৬৩ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী চিকিৎসা ও সচেতনতার কাজ করছেন বলে দাবি বিডিও-র। যদিও মানতে রাজি নন এলাকার মানুষ। খেজুরডাঙায় বাসিন্দা নাজিমুল মণ্ডল বলেন, ‘‘বাবা, মা ও স্ত্রী তিন জনেই জ্বরে আক্রান্ত। বাড়িতে কেউ খোঁজ নিতে আসেননি। এলাকা পরিষ্কার করতেও কাউকে দেখিনি।’’
দেগঙ্গা ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজ সিংহ বলেন, ‘‘প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৪০০ জন জ্বর নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে আসছেন। প্রয়োজনে তাঁদের রক্ত পরীক্ষাও হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, এই জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।