দিশাহারা: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন রেনুকাদেবীর নাতনি। নিজস্ব চিত্র
ছেলে-বৌমা জ্বরে পড়েছিল। লাগাতার সেবা করে গিয়েছেন রেনুকা মণ্ডল। নিজেও পড়েন জ্বরে। ছেলে-বৌমা সুস্থ হয়ে উঠলেও মারা গিয়েছেন বাদুড়িয়ার বাগান আটঘরা গ্রামের বছর ষাটেকের রেনুকাদেবী।
শুক্রবার বাদুড়িয়ার মলয়াপুরের বাসিন্দা ফিরদৌসি বিবিরও (৩০) মৃত্যু হয়েছে জ্বরে ভুগে।
দুই পরিবারেরই দাবি, মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে। রেনুকাদেবীর ক্ষেত্রে আরজিকর হাসপাতালের দেওয়া শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণই লেখা হয়নি। ফিরদৌসি বিবির মৃত্যুর কারণ হিসাবে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল লিখেছে ‘ভাইরাল ফিভার।’
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। বাদুড়িয়ার বিধায়ক কাজি আব্দুর রহিম দিলু বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে বাদুড়িয়ায় প্রতিদিন মানুষ মরছে। অথচ, মৃত্যুর শংসাপত্রে সে সবের উল্লেখই নেই। মৃত্যুর কারণ লেখা না হলে বিমা কিংবা সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হহতে পারে পরিবারগুলি।’’
রেনুকাদেবীর গ্রামে বহু বাড়িতে জ্বর ছড়িয়েছে। পরিবারের প্রায় সকলেই জ্বরে কাহিল।
বিধায়ক এ দিন গিয়েছিলেন গ্রামে। রেনুকদেবীর ছেলে গোপাল বিধায়ককে বলেন, ‘‘আমাদের সেবা করছিলেন মা। তিন দিন আগে ওঁরও জ্বর আসে। গ্রামের চিকিৎসক ওষুধ দিচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বাড়াবাড়ি হওয়ায় মাকে হাবরা হাসপাতালে ভর্তি করি। প্লেটলেট কমে যাওয়ার সেখান থেকে মাকে রেফার করা হয় আরজিকরে। রাত আড়াইটে নাগাদ সেখানেই মারা যান মা।’’
দিলু এ দিন ফিরদৌসির বাড়িতেও যান। কৃষিজীবী আলাউদ্দিন মণ্ডলের ছোট ছোট দুই সন্তান। স্ত্রীর মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে কী ভাবে সংসার সামলাবেন, তা ভেবে আকূল ওই যুবক। কান্নায় ভেঙে পড়লেন কথা বলতে বলতে।
বারান্দায় তখন শোয়ানো ফৌরদৌসির দেহ। বাবাকে সেখানে বসে কাঁদতে দেখে চোখ ছলছল করে ষষ্ঠ শ্রেণির আলামিন এবং দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া রুহুল আমিনের। ওদেরও গায়ে জ্বর।
পরিবারটির দশা দেখে আশপাশের লোকজনও চোখের জল সামলাতে পারছিলেন না।