ধোঁয়া-অভিযান: মশার তাড়ানোর চেষ্টা। বসিরহাটে ছবিটি তুলেছেন নির্মল বসু
ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় দিন দিন বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ। কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। যদিও এখনও পর্যন্ত ক্যানিং মহকুমায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবর নেই বলে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। কমছে প্লেটলেট। অধিকাংশ রোগীর জ্বরের সঙ্গে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, গা-পেট-চোখে ব্যথার মতো ডেঙ্গির বহু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ক্যানিং ২ ব্লকের যশোরপাড়া, হরিণদা, মঠেরদিঘি, কালিকাতলা, মৌখালি, ক্যানিং ১ ব্লকের নিকারিঘাটার পশ্চিম হাতামারি, বাঁশড়ার লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সাতমুখো, ঘুটিয়ারিশরিফ, বাসন্তীর সোনাখালি, বল্লারটোপ, রামচন্দ্রখালি এলাকায় বহু বাড়িতে জ্বর। ভাঙড় ১ ও ২ ব্লকেও একই পরিস্থিতি।
বেশ কয়েকজনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। গত বুধবার ভাঙড় ২ ব্লকের কাঁঠালিয়া গ্রামের ইদ্রিশ মোল্লা (৩৩) জ্বরে ভুগে মারা যান। তাঁর প্লেটলেট খুবই কমে গিয়েছিল। পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ইদ্রিশের।
ওই ব্লকের নাংলা গ্রামের সেরিনা বিবিও (৩৮) জ্বরে মারা যান। তাঁরও পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। যদিও ব্লক স্বাস্থ্য দফতর তা মানতে নারাজ।
ক্যানিংয়ের জীবনতলা, মৌখালি, মঠেরদিঘি, ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা অদুত মোল্লা বলেন, ‘‘অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন তা মানতে চাইছে না। ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভাইরাল ফিভার বলা হচ্ছে।” জ্বরের প্রকোপ রুখতে প্রশসান বা স্বাস্থ্য দফতরের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ।
তবে মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যেখানে যেখানে জ্বরের প্রকোপ আছে, সেখানে এএনএমআর, আশা, বিপিএইচএন, স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য শিবির করা হচ্ছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন এলাকা থেকে পতঙ্গ বিশারদেরা মশার লার্ভা সংগ্রহ করছেন। প্রচারও চলছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা সব রকম ভাবে মানুষের পাশে থেকে কাজ করছি। যে সব এলাকায় জ্বরের প্রকোপ আছে, সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে শুরু করে রোগীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এসে রক্ত পরীক্ষা করানো— সবই করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির করা হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করতে নানা উদ্যোগ করা হয়েছে। তবে সব কিছুর পরেও মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।