বেআইনি ক্লাব ভাঙার কাজ চলছে। সোমবার, সল্টলেকের নয়াপট্টিতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
স্থানীয় বাধায় পর পর দু’বার ব্যর্থ হওয়ার পরে অবশেষে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে সক্ষম হল প্রশাসন। সোমবার দুপুরে বিধাননগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপট্টিতে ‘আদিত্য স্মৃতি সঙ্ঘ’ নামে একটি ক্লাব ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছে বিধাননগর পুরসভা। এ দিন অবশ্য প্রশাসনকে আর কোনও বাধার মুখে পড়তে হয়নি। ওই ক্লাবের সভাপতি তথা পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি জয়দেব নস্কর জানান, রবিবার তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আদালতের নির্দেশকে যাতে সকলে মান্যতা দেন, সে ব্যাপারে তাঁদের বোঝানো হয়। বাসিন্দারাও সহমত হন।
এর আগে ৯ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি, দু’বার আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু দু’বারই স্থানীয়দের একাংশের প্রবল বাধার মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয় পুরসভা ও পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের। এমনকি, দ্বিতীয় বার পুলিশ আধিকারিক ও পুরকর্মীদের হেনস্থা করার পাশাপাশি তাঁদের লক্ষ্য করে কেরোসিন ছুড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ। ক্লাব চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও সেই ঘটনায় অবশ্য কারও বিরুদ্ধেই কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি পুলিশ-প্রশাসনকে।
একটি মামলার ভিত্তিতে ওই ক্লাবটি বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল বিধাননগর পুরসভা। তাই সেটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পুরসভার সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে হাই কোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও হেরে যান জয়দেব।
ক্লাবের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন বাপ্পা প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ ছিল, তাঁদের জমি দখল করেই ক্লাবটি তৈরি হয়েছে। যদিও জয়দেবের দাবি ছিল, জমিটি সরকারি। কিন্তু হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, ক্লাবের কাছে নির্মাণের কোনও অনুমোদিত নকশা বা নথি ছিল না। হাই কোর্ট সেই কারণে ক্লাবটি ভাঙার নির্দেশ
দেয়। পরে সুপ্রিম কোর্টও সেই রায় বহাল রাখে।
এই ঘটনার সূত্রে বিরোধীদের প্রশ্ন, এক প্রভাবশালী নেতার অনুগামী ক্লাবের সভাপতি বলেই কি সেটি ভাঙার নির্দেশ কার্যকর করতে এতটা হিমশিম খেতে হল প্রশাসনকে?
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয়েরা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, ক্লাবের সঙ্গে তাঁদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। পুজো থেকে শুরু করে সামাজিক নানা কর্মকাণ্ড,
ছোটদের নানা প্রশিক্ষণ চলে ওই ক্লাবে। এত বছরে কেউ কোনও আপত্তি তোলেননি। আচমকা ক্লাবটি ভাঙা হবে, এমন খবরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।
এ দিন অবশ্য ক্লাবটি ভাঙার সময়ে ক্লাবের সদস্যেরা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ সেখানে হাজির ছিলেন। তবে, কেউ কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেননি।
ক্লাবের মুখ্য সংগঠক জয়দেব বলেন, ‘‘ক্লাব আমার একার নয়, সকলের। বছরভর এলাকার মানুষের পাশে থাকি আমরা। আমাদের এই ক্লাব জমি-মাফিয়াদের চক্রান্তের শিকার
হল।’’ বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, তেতলা ওই ক্লাবের আশপাশে একাধিক বাড়ি রয়েছে। ক্লাবের পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে, সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে ক্লাবটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগবে।