গতিহারা: বহু জায়গায় এই হাল হয়েছে নদীর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
স্রোতস্বিনী ইছামতী নাব্যতা হারিয়ে অনেক দিন ধরেই মৃতপ্রায়। পলি জমে নদী গতিপথ হারিয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ই কচুরিপানায় ভরা থাকে। উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার কয়েক লক্ষ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হোক। বিক্ষিপ্ত ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের পক্ষ থেকে কয়েক বার পলি তুলে সংস্কারের কাজ হলেও ইছামতীর হাল ফেরেনি। এ বার ইছামতী নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এবং নদী নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইছামতী নদী উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবি তুলল পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটি। ওই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, নুসরত জাহান, প্রাক্তন সাংসদ তাপস মণ্ডল এবং কমিটির সম্পাদক সুভাষ চট্টোপাধ্যায়।
সুভাষ বলেন, ‘‘সাংসদ সৌগত রায়ের মাধ্যমে শনিবার চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিষয়ে উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করেছেন। আমাদের মনে হয়েছে ইছামতীকে বাঁচাতে হলে ইছামতী নদী উন্নয়ন পর্ষদ বা ইছামতী নদী উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন। পর্ষদ তৈরি হলে নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এবং নদীর মধ্যে থাকা বেআইনি বাধা সরিয়ে নিয়মিত নদীর রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।’’
খাতায়-কলমে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালি এলাকায় চূর্ণী ও মাথাভাঙা নদীর সংযোগস্থলে মাথাভাঙা নদী থেকে ইছামতীর সৃষ্টি। যদিও নদীর এখন কার্যত কোনও উৎসমুখ নেই। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নদীর তিনটি এলাকায় পলি তুলে সংস্কার করার আবেদন করেছেন। তার মধ্যে সাড়ে ছত্রিশ কিলোমিটার বাংলাদেশের মধ্যে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই এলাকায় ড্রেজিং করার আবেদন করা হয়েছে। বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার মুন্সিগঞ্জের পদ্মা থেকে মাথাভাঙার সৃষ্টি। মাথা ভাঙাতেও এখন স্রোত নেই।
উৎসমুখে ইছামতীর এই অবস্থা হল কী ভাবে?
স্থানীয় ইতিহাস ঘেঁটে ও প্রবীণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ব্রিটিশ আমলে পাবাখালিতে ইছামতী নদীর উপরে একটি রেলব্রিজ তৈরি হয়েছিল। সুভাষ জানান, রেল দুর্ঘটনায় ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯১০ সাল নাগাদ রেলব্রিজের সংস্কার কাজ করার সময়ে বড় বড় বোল্ডার ফেলা হয়েছিল। যা আর তোলা হয়নি। জলের চাপ সামলাতে দেওয়া হয়েছিল গার্ডওয়াল। ফলে ধীরে ধীরে নদীবক্ষে পলি জমতে থাকে। পরবর্তী সময়ে বাম আমলে নদীর জমি পাট্টা হিসাবে বিলি করা হয়। সব মিলিয়ে নদী ওই এলাকায় জলশূন্য হয়ে পড়েছে।