দেহ তুলে দেওয়া হল বিএসএফ-এর তরফে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বনগাঁর সুটিয়া সীমান্তে সোমবার বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু হয় এক জনের। বিএসএফের দাবি, সে পাচারকারী। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, মৃত ব্যক্তি তাদের বাহিনীর সদস্য। তাঁর নাম মহম্মদ রাইসুদ্দিন। বাড়ি বাংলাদেশের শিবগঞ্জ উপজেলায়।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ময়না তদন্তের পরে বুধবার সকালে কফিনবন্দি দেহ নিয়ে বিএসএফ পৌঁছয় সুটিয়া সীমান্তে। বনগাঁ হাসপাতাল থেকে সুটিয়া পর্যন্ত বনগাঁ থানার পুলিশও সঙ্গে ছিল। পরে বিজিবির হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়।
বিএসএফ জানিয়েছে, গরু পাচারের সময়ে এক জওয়ান বাধা দিলে তাঁকে ঘিরে ধরে কাস্তে নিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে জনা চারেক পাচারকারী। জওয়ান আত্মরক্ষায় গুলি চালান। তাতেই দলের এক জন জখম হন। বাকি পাচারকারীরা গরু নিয়ে বাংলাদেশের দিকে পালায়। জখম পচারকারীকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানেই মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি গরু ও কিছু ধারাল অস্ত্র উদ্ধার হয়। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিএসএফ বনগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে বিজিবি-র কর্তারা ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বিএসএফকে জানান, তাঁদের এক সীমান্তরক্ষী নিখোঁজ। তাঁরা সন্দেহ করছেন, তিনি ভারতীয় সীমান্তের দিকে এসেছেন। বৈঠকে বিজিবি কর্তারা তাঁর একটি ছবিও দেন। ছবি দেখে মৃত ব্যক্তিকে চেনা যায়। জানা যায়, তাঁর নাম মহম্মদ রাইসুদ্দিন। তিনি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য।
তবে লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরে গরু পাচারকারীদের সঙ্গে তিনি কী কারণে ভারতীয় ভূখণ্ডে এসেছিলেন, কেনই বা জওয়ানের উপরে হামলা চালালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএসএফের দাবি, বিজিবি-র কেউ যে পাচারে জড়িত থাকতে পারে, তা তাদের ধারণা ছিল না।
বাংলাদেশের একটি সূত্রের দাবি, সোমবার ভোরে বিজিবি-র যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা সীমান্ত চৌকির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে এক দল গরু পাচারকারীকে আসতে দেখে বিজিবি কর্মীরা আটকানোর চেষ্টা করেন। পাচারকারীরা ভারতের দিকে পালাতে থাকে। বিজিবি সদস্য রাইসুদ্দিন ধাওয়া করতে গিয়ে ঘন কুয়াশায় দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। বিএসএফ-কে এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, কূটনৈতিক ভাবে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে, এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, তবে কি গরু পাচারকারীরা বনগাঁ সীমান্ত এলাকায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে?
কিছু দিন আগে বাগদা সীমান্ত দিয়েও গরু পাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। বাগদার চাষিদের অভিযোগ ছিল, পাচারকারীরা চাষের খেতের মধ্যে দিয়ে পাচারের গরু নিয়ে যাচ্ছিল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল খেতের ফসল। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসেছিল বিএসএফ ও পুলিশ।
বনগাঁ মহকুমার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, শীতের রাতে ও ভোরে ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে গরু পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জওয়ানেরা সক্রিয় আছেন। তবে মহকুমার সীমান্ত এলাকায় সর্বত্র এখনও কাঁটাতার নেই। নদী সীমান্তও রয়েছে। সেই সুযোগ পাচারকারীরা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সুটিয়া সীমান্তে যে এলাকা দিয়ে গরু পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল বলে অভিযোগ, সেই জায়গায় সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। কাঁটাতার নেই। একটি খাল দু’দেশের সীমানার মাঝে আছে। এলাকার লোকজন জানান, কয়েক বছর আগেও ট্রাকে করে ভিন্ রাজ্য থেকে গরু আসত। এখন সে ভাবে গরু আসে না। তবে পাচারকারীরা রাজ্যের বিভিন্ন গরুর হাট থেকে বাড়িতে পোষার নাম করে বা চাষের কাজে লাগানোর নামে গরু নিয়ে আসে। তারপর তা সীমান্তে গোপন এলাকায় জড়ো করে রাখা হয়। বিএসএফ ও পুলিশ কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, সীমান্তে গরু পাচার রুখতে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।